মিঠাপানিতে বাড়ছে মাছ চাষ

শরীয়তপুরে মিঠাপানির মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে মৎস্যজীবীদের। বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। ভালো দাম পাওয়া এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মৎস্যজীবীদের এই আগ্রহ বাড়ছে।

মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় মিঠাপানির মাছ চাষের ১৫ হাজার ১৮২টি পুকুর ও খামার রয়েছে। এর আয়তন ২৭ হাজার ২৫ হেক্টর। মাছ চাষের সঙ্গে জেলার ছয়টি উপজেলার ১৬ হাজার ৯৬৯ জন মৎস্যজীবী এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুকুর ও খামারে পাঙাশ, রুই, তেলাপিয়া, চিংড়ি, কাতল ও বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছ চাষ করেন। উৎপাদিত মাছ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সারা বছর বিক্রি করা হয়। আর ওই মাছের একটি বড় বাজার হচ্ছে চাঁদপুর। চাঁদপুর থেকে পাইকারেরা কিনে নিয়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। তাঁরা বলেন, জেলার আবহাওয়াও মাছ চাষের অনুকূলে। মাটি খুঁড়ে মিঠাপানি পাওয়া যায়। খামার করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না। 

বরিশালের পোর্ট রোড এলাকায় ইলিশের ব্যবসা করতেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের জয়ন্ত দাস। তিনি ইলিশের ব্যবসায় লোকসান করে শরীয়তপুরের গ্রামে ফিরে আসেন। পাঁচ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন স্থানে মিঠাপানির মাছের খামার গড়ে তুলেছেন। জয়ন্ত দাস বলেন, ইলিশের ব্যবসা করে অনেক টাকা লোকসান দিয়েছেন। পরে গ্রামে এসে পতিত জমি ভাড়া নিয়ে মাছের খামার করেছেন। খামার করার পরের বছর থেকেই টাকা আয় হচ্ছে। তাঁদের খামারে উৎপাদিত মাছের অনেক চাহিদা। 

নড়িয়া উপজেলার মাছচাষিরা জানান, এক একর জমিতে রুই, কাতল ও কার্পজাতীয় মাছ চাষ করতে বছরে খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খামারের জমি ভাড়া প্রতি শতাংশ পাঁচ শ টাকা হিসাবে একরে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাছের পোনা দিতে হয় ৫০ হাজার টাকার, খাবারে খরচ হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ওষুধ লাগে ১২-১৫ হাজার টাকার, আর শ্রমিক বাবদ খরচ হয় ৩৭ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর বছরে মাছ পাওয়া যায় প্রতি একরে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি একরে চাষিদের লাভ হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার নিজের ৫ একর ও ২০ একর জমি ভাড়া নিয়ে মাছের খামার করেছি। ওই খামারে রুই, কাতল ও কার্প মাছ চাষ করছি। জমি ভাড়া শ্রমিক ও অন্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর ১০-১২ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ২০১৫ সালে ১৬ হাজার ৪১ মেট্রিক টন মিঠাপানির মাছ উৎপাদন করা হয়। ২০১৬ সালে তা এক লাফে বেড়ে ১৮ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। এরপরের বছরগুলোয় অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন ও ২০১৯ সালে ১৯ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের প্রধানিয়া বলেন, নদ-নদীতে মাছের আকাল থাকায় বিকল্পভাবে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় জেলার মৎস্যজীবীরা পুকুর ও খামারে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য পুকুর-খামারে মাছের চাষ বাড়ানো হয়েছে। পুকুর-খামারে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।