বন্দরে করোনা রোধে কী ব্যবস্থা, জানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশের স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে দিয়ে প্রবেশ করছেন, তাঁদের কী ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে আজ বৃহস্পতিবার এ নির্দেশনা দেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে, এ–সংক্রান্ত জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইসরাত জাহান। এরপর মৌখিকভাবে হাইকোর্ট এই নির্দেশনা দেন।

ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া জীবনঘাতী করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে—এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এ–সংক্রান্ত পত্রিকার খবর আদালতের নজরে আনার পর আদালত মৌখিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে তা জানাতে বলা হয়েছে।

প্রথম নির্দেশনা, বিদেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশের বিমান, স্থল ও নৌবন্দর দিয়ে প্রবেশ করছেন, তাঁদের কী ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যাঁরা পরীক্ষা করছেন, তাঁরা প্রশিক্ষিত কি না?

দ্বিতীয় নির্দেশনা, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই আলাদা চিকিৎসাব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিন নম্বর নির্দেশনা, দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জামাদি আছে কি না? যদি পর্যাপ্ত না থাকে, জরুরি ভিত্তিতে এসব সরঞ্জাম আমদানি করা।

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যদি কোনো ধরনের অবহেলা দেখতে পান, তাহলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করবেন। আদালত এটি বলেছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী ইসরাত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর আমরা দেখেছি, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের সব জাতীয় দৈনিকে প্রতিদিনই খবর প্রকাশিত হচ্ছে, জীবনঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, বিদেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য তাঁদের যথাযথ পরীক্ষা করা হচ্ছে না। পরিচিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে যে হিমশিম অবস্থা, সেখানে অজানা করোনাভাইরাস নিয়ে কেমন অবস্থা দাঁড়াতে পারে?’

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ডিসেম্বর মাসে চীনের সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গতকাল বুধবার পর্যন্ত চীনসহ ৮১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দেশের বাইরে থাকা সাতজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন চিকিৎসাধীন। বাংলাদেশে কেউ এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, সংক্রমণের ধরনের কারণে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।