আসন্ন বর্ষায় ঢাকা উত্তরের ১১ এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা

জলাবদ্ধতার কারণগুলোর এখনো সমাধান হয়নি। ফাইল ছবি
জলাবদ্ধতার কারণগুলোর এখনো সমাধান হয়নি। ফাইল ছবি

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা হতে পারে এমন ১১টি এলাকা চিহ্নিত করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এসব এলাকায় আগের বছর জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছিল। এখনো জলাবদ্ধতার কারণগুলোর সমাধান হয়নি। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ জন্য সরকারের একাধিক সংস্থার দায় রয়েছে।

 এই ১১ এলাকায় জলাবদ্ধতার সঙ্গে ডিএনসিসি ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হাতিরঝিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই তালিকা ডিএনসিসির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতার প্রতিকারে করণীয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দীন বলেন, এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আগের বছরেও ভোগান্তি হয়েছে। এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের অন্যান্য সংস্থা আন্তরিক না হলে একা সিটি করপোরেশনের পক্ষে এর সমাধান সম্ভব নয়।

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুমে যেন জলাবদ্ধতার কারণে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে না হয়। জনগণ অজুহাত শুনতে চায় না।

নয়াটোলার শহীদ আবদুল ওহাব রোডে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা হয়। ওয়াসার সরু পাইপ, বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতায় এই অবস্থা হচ্ছে। প্রতিকার হিসেবে ওহাব রোড এবং নয়াটোলা জাহাবক্স লেনে অধিক ব্যাসের পাইপ  বসানো, নয়াটোলা শাহ সাহেব বাড়ি রোডে চল্লিশ ঘর মসজিদ–সংলগ্ন, আমবাগানের ২২৭/বি হোল্ডিং–সংলগ্ন সংযোগ হাতিরঝিলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

পানি নির্গমনের পথ না থাকায় নিউ ইস্কাটনের বিয়াম গলিতে জলাবদ্ধতা হয়। বিয়াম গলির পশ্চিম পাশের ৬৩ নম্বর হোল্ডিং এবং রহমতুল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা মসজিদের পাশের সংযোগটি হাতিরঝিলের সঙ্গে মেলাতে হবে। মধুবাগ প্রধান সড়কে ওয়াসার সরু পাইপের কারণে জলাবদ্ধতা হয়। বড় ব্যাসের পাইপ বসানো এবং মধুবাগ জামে মসজিদের পাশের হাতিরঝিলে যুক্ত নির্গমন পথটি সংস্কার করতে হবে।

কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবন থেকে সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশে পানিনিষ্কাশনের পাইপটি সরু, পানির চাপের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বৃষ্টিতে এফডিসি–সংলগ্ন রেলগেট থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত দুই থেকে তিন ঘণ্টার অস্থায়ী জলাবদ্ধতা হয়। এ জন্য বিদ্যমান লাইনটি সংস্কার করে নতুন তিনটি নির্গমন পথ নির্মাণের সুপারিশ করেছে ডিএনসিসি।

হাতিরঝিল প্রকল্পের আগে কারওয়ান বাজার এলাকার পানি সরাসরি হাতিরঝিলে যেত। হাতিরঝিল প্রকল্পের পর সরাসরি পানিনিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। কারওয়ান বাজারের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সামনে থেকে সোনারগাঁও হোটেল–সংলগ্ন স্থায়ী নির্গমন পথ পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বৃষ্টির পানি নির্গমনের নতুন পথ নির্মাণ বা বিদ্যমান পথ সংস্কারের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। 

বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী ২৭ নম্বর পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে প্রাকৃতিক জলাশয় ছিল। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজের সময় এই জলাশয় ভরাট করে। পরে ডিএনসিসির নির্দেশনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ ভরাট করা মাটি কিছুটা সরালেও আগের মতো প্রশস্ত ও গভীর হয়নি। এই প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা থাকার কথা নয়।

ঢাকা ওয়াসার সরু নির্গমন পথের কারণে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণির হলিডে ইন হোটেল, পশ্চিম নাখালপাড়া ৬ নম্বর গলি থেকে ৮ নম্বর গলি হয়ে পাগলার পোল পর্যন্ত, পূর্ব ও পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নির্গমনের পথ না থাকায় উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকা ও মণিপুরিপাড়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

পান্থকুঞ্জ পার্ক, কাঁঠালবাগান, পান্থপথ হয়ে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত বক্স কালভার্ট ভরাট হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ পানিনিষ্কাশনের লাইন ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড, গ্রিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে পান্থপথের বক্স কালভার্ট এবং অভ্যন্তরীণ লাইনগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ওয়াসার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়াসার লাইনগুলো পরিষ্কার রয়েছে। কোন লাইন সরু, কোথায় সমস্যা—এগুলো নিয়ে সিটি করপোরেশন ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ বলেন, গত বর্ষার পরে অনেক সময় পেরিয়েছে। এত দিনে উদ্যোগ নিলে চিহ্নিত এলাকাগুলোর জলাবদ্ধতার সমাধান হতে পারত। এখনো সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে, উদ্যোগ নিলে বর্ষার আগেই সমাধান সম্ভব।