এই আঙিনা তাঁদের জন্য, যাঁরা জীবনভর দিয়েছেন

ফুলে ফুলে সাজানো প্রবীণাঙ্গণের আঙিনা। সুন্দর এই দৃশ্যের ছবি তুলে রাখছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে।  প্রথম আলো
ফুলে ফুলে সাজানো প্রবীণাঙ্গণের আঙিনা। সুন্দর এই দৃশ্যের ছবি তুলে রাখছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে। প্রথম আলো

খয়েরি টাইলস লাগানো ঝকঝকে হাঁটা পথ। পথের দুই পাশে সবুজ ঘাসের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো অনেক রকমের গাছ। তাতে ফুটেছে চোখে রং ধরানো নানা রঙের ফুল। ফুলের ডালে, পাপড়িতে প্রজাপতি উড়ছে, বসছে। মৌমাছি গুনগুন করছে—এমনই মন ভালো করা পরিবেশ-প্রকৃতি মৌলভীবাজার প্রবীণাঙ্গনে।

মৌলভীবাজার পৌর জনমিলন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রবীণাঙ্গন। একে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের আনন্দ-বিনোদনের কথা মাথায় রেখে সাজিয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। বয়সের ক্লান্তি মুছে ফেলার সব আয়োজন চারদিকে মমতায় ছড়ানো।

পৌরসভা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পৌর জনমিলন কেন্দ্র মূলত সভা-সমাবেশের একটি স্থান। টিলার ওপর বাংলো ধাঁচের মিলনায়তন। টিলার চারদিকের ঢালুতে ছিল নানা ধরনের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক গাছ। সভা-সমাবেশের জন্য এখন বিকল্প অনেক স্থান তৈরি হলেও পৌর জনমিলন কেন্দ্রের গুরুত্ব কমেনি। পৌর জনমিলন কেন্দ্রের সেই পরিচিত দালান ও টিলাভূমিকে সাজানো হয়েছে নতুনভাবে। জনমিলন কেন্দ্রের পশ্চিম ও উত্তর পাশের খালি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান। আধুনিক স্থাপত্যকলায় স্থানটিকে তৈরি করা হয়েছে। এখানে ঢালু জায়গায় লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ।

শুধু ফুলের বাগানেই আটকে নেই আয়োজন, জনমিলন কেন্দ্রের অব্যবহৃত তিনটি কক্ষকে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। তিন কক্ষের একটির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে পাঠাগার। সাজিয়ে রাখা আছে অনেক ধরনের বই। পাঠকদের চাহিদার কথা চিন্তা করে পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। সঙ্গে আছে টেলিভিশন। পৃথক দুটি কক্ষ আছে নারী ও পুরুষদের বিশ্রামের জন্য। মুক্ত স্থানে আছে বসার বেঞ্চ। ভোর থেকে সকাল ৯টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্থানটি উন্মুক্ত থাকে। গত বছর ৩০ নভেম্বর প্রবীণাঙ্গনটি উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, যাঁরা একটা সময় তাঁদের পুরোটাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিয়েছেন, প্রকৃতির নিয়মে তাঁরা এখন বার্ধক্যে। বয়সের ভার, বার্ধক্যজনিত রোগব্যাধি ও জরা তাঁদের স্থবির করে রাখে। চাইলেই তাঁরা সবখানে যেতে পারেন না। সবখানে বসে নির্মল আড্ডা দিতে পারেন না। অথচ এই সময়ে তাঁদের আরও বেশি আপনজনের সঙ্গ ও সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। বিষয়টি চিন্তা করেই স্থানটি শুধু বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

পৌর মেয়র ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাগান তৈরি করা হয়তো তেমন কষ্টের নয়, কিন্তু এটাকে ঠিকঠাক রাখা ও নিয়মিত পরিচর্যার বিষয় আছে। নিয়মিত পানি দিতে হচ্ছে। পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে নানা ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। প্রায়ই নিজে ছুটে আসি, যাতে গাছের কোনো অবহেলা না হয়। এখন ফুল ফুটছে। আরও নতুন নতুন ফুলের গাছ এনে লাগানো হবে। এটা দেখে অনেক প্রতিষ্ঠানও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ফুলের গাছ লাগাচ্ছে।’