পরিবারের দুজন করে প্রার্থী হওয়ার কারণ কী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

ভাইয়ের সঙ্গে আরেক ভাই, আবার বাবা–ছেলে একসঙ্গে—চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এরকম  মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ছয়টি। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটিতে ভাইয়ের সঙ্গে ভাই, আরেকটি ওয়ার্ডে আছেন বাবা-ছেলে দুজনেই।

নির্বাচনে কোনো ধরনের অঘটন এড়াতে এই কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নির্বাচনে ডামি প্রার্থী হিসেবেও তাঁরা নির্বাচন করতে পারেন বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। দুই ওয়ার্ডের প্রার্থীরা তা সরাসরি স্বীকার না করলেও বলেছেন, কৌশলগত কারণে পরিবারের সদস্যরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহারও করে নিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরের ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ইয়াছিন চৌধুরী ও তাঁর ভাই মো. নুরুল আলম। তবে ইয়াছিন চৌধুরী বিএনপির সমর্থন পেলেও নুরুল আলম প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে। এর আগেও দুটি নির্বাচনে দুই ভাই ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে সবগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন ইয়াছিন চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে মোট ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নগরের ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ। এই ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শৈবাল দাশের বড় ভাই রাজীব দাশ। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন শৈবাল দাশ। এখানে প্রার্থী হয়েছেন আটজন। এ ছাড়া ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গায় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী। কিন্তু একই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর ছেলে মো. ওয়াহিদুল আলম চৌধুরী। এখানে প্রার্থী আছেন নয়জন।

জানতে চাইলে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিএনপি প্রার্থী ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগ করেন। আর তিনি বিএনপি। ভাইয়ের নির্বাচন ভাই করবেন। আগেও দুবার নির্বাচন করে হেরেছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, ভাই হলেও তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে।

আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল আলম বলেন, দল মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচন করছেন। ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। উনি বিএনপি করেন। বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে তাঁদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। আর তিনি এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

কৌশলগত কারণে বড় ভাই ব্যবসায়ী রাজীব দাশ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ। তিনি বলেন, ‘এবার নমিনেশন নিয়ে একটু অন্যরকম কথাবার্তা হয়েছিল। কখন কোন দিক দিয়ে কী হয়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম কথা বলছিলেন। তাই দুই ভাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তাই দাদা (রাজীব) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।’

ছেলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী। তিনি বলেন, কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। তবে তা বোঝা যাবে ৮ মার্চ। ওই দিন প্রত্যাহার করবে কি করবে না তা জানা যাবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবার ২২০ জন কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে বাছাই শেষে ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে নয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখন প্রার্থী আছেন ২১১ জন। ৮ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মার্চ। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ।