বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এল ওরা

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শুক্রাবাদ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শুক্রাবাদ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সকাল আটটায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শুক্রাবাদ ক্যাম্পাসে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক ও অনলাইন বাছাই পর্বের বিজয়ী তারা। জাতীয় পর্বে অংশ নিতে এসেছে ঢাকায়।

ঠিক পৌনে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তর হল গমগম করে উঠল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠে। আয়োজনের শুরুতে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ভিডিও প্রদর্শন। এরপর এ বছর রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার (আইসিপিসি) ওয়ার্ল্ড ফাইনালের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুয়েট হেলবেন্ট দলের সদস্যরা মঞ্চে আসেন। বুয়েট হেলবেন্ট দলের সদস্য আশিকুল ইসলাম, অর্ঘ্য পাল ও প্রিতম কুন্ডু প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যায় নির্ধারিত কম্পিউটার ল্যাবের দিকে। শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হয় চার ঘণ্টার মূল প্রতিযোগিতা। ১১টি সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয় প্রতিযোগীদের।

প্রতিটি দলে থাকার কথা তিনজন করে। অনেক দলের এক বা দুজন আসেনি। এতে তারা দমে যায়নি। বরং প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এক বা দুই সদস্যের বেশ কয়েকটি দল শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্কুলের ফারহান আহমেদ তাঁদের একজন। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেল, ফারহান একা লড়াই করে স্কুল পর্যায়ে দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছিল, অভিভাবকেরা তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী অনন্যা তালুকদারের মা আল্পনা তালুকদারের সঙ্গে কথা হয়। পেশায় শিক্ষক আল্পনা তালুকদার বলেন, ‘আমি প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী, মেয়েরা আরও বেশি আগ্রহী। আমি চাই, তারা ভালো করুক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাক।’

দুপুরের খাবারের বিরতির পর নিত্য রঙ-এর নাচের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের জাদু দেখান স্বপন দিনার। বিকেল চারটার দিকে প্রোগ্রামিং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন বিচারক প্যানেলের সদস্য মো. হাসিনুর রহমান, রাফিদ বিন মোস্তফা ও ফাহিম শাহরিয়ার। সমাপনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘তোমরা যখন বড় হবে, তখন আরও বড় সমস্যা সমাধান করতে হবে।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলোর এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য একটা সুযোগ। শুধু জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় নয়, লম্বা সময়ের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সাড়া জাগানো কিছু করতে হলে কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের নতুন উদ্ভাবন তোমরা করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে শুধু ভালো প্রোগ্রামার নয়, অনেক ভালো মানুষ হতে হবে।’

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আগামী ৫০ বছরে রোবটিকস, প্রোগ্রামিংসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।’ প্রথম আলোর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি আগামী দিনে এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার কথা বলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিপিসির বিচারক শাহরিয়ার মঞ্জুর বলেন, প্রোগ্রামিংয়ে ভালো করার জন্য গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানও পড়তে হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঁচটি স্কুলকে তিনটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাফিন আহমেদ, মাহির লাবিব, আরশাদ ও প্রথম রানার্সআপ হয় ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের জোহায়ের, জোবায়ের ও আবিদুরের দল। কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় নটর ডেম কলেজের তাসমিম রেজা, জাবের আহমেদ ও ওয়ায়েস ইসলাম ও রানার্সআপ হয় চট্টগ্রাম কলেজের রুবাইয়াত-ই-জামান, মামুনুন সিয়াম ও অংকন দে। উভয় গ্রুপে ১০টি করে দলকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রমের প্রধান মুনির হাসান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী।