করোনা নিয়ে কাজ করছে না সরকার, ব্যস্ত মুজিব বর্ষ নিয়ে: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কিছু করছে না বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের অসুখটি সারা পৃথিবীতেই মানুষের শুধু ক্ষতি করছে তা নয়, এটা অর্থনীতির ওপরে প্রচণ্ড রকমের প্রভাব ফেলছে। সরকারের এই বিষয়ে কিছুটা বলা যেতে পারে যে তাদের (সরকার) আগ্রহ কম। ব্যস্ত তো হয়ে আছে মুজিব বর্ষ নিয়ে।’

আজ শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই বৈঠক হয়।

লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্য বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি সময় দিতে পারছে না তারা। ফলে এখানে এই ভাইরাসটা ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট রকমের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে দিস ইজ টোটাল ইরেসপনসেবিলিটি পার্ট অব দ্য গভর্নমেন্ট। এই রকম একটা ব্যাপক বিপর্যয় বিশ্বজুড়ে চলছে, সেখানে এই বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত ছিল সরকারের আগ্রাধিকার কাজ, প্রথম কাজ। এটা তারা করছে না। এ ব্যাপারে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলছি যে প্রত্যেকটি পোর্টে স্ক্যানিং মেশিন থাকা দরকার, লোকবল থাকা উচিত। ডায়াগনোসিস করার জন্য যে কিটস, তার অপ্রতুলতা আছে, পাওয়া যাচ্ছে না, মাস্কেরও যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একই সঙ্গে ইমার্জেন্সি হসপিটাল ওপেন করে দেওয়া উচিত ছিল, যেখানে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে, সেই ব্যবস্থা থাকবে। এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানতে পারিনি।’

সদ্য ওমরাহ পালন শেষে দুবাই হয়ে দেশে ফেরা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাহেব কয়েক দিন আগে দুবাই থেকে এসেছেন। তিনি বলেছেন যে এয়ারপোর্টে একটা ফরম দেওয়া হচ্ছে। তাতে বলা আছে যে কোন কোন দেশ আপনি ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু ফরমটা কেউ কালেক্টও করছে না। যখন যাত্রী ইমিগ্রেশনে আসছেন এবং তাঁর কাছে ওই বিষয়ে জানতে যাওয়া হচ্ছে না, তাঁর কোনো পরীক্ষাও করা হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যাপার।’

ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বাংলাদেশে এটা এত বেশি ইনএফিসিয়েন্ট, একমাত্র ঢাকা এয়ারপোর্ট ছাড়া আর বোধ হয় কোথাও এই স্ক্রিনিং মেশিন নাইও সম্ভবত।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে করোনাভাইরাস নিয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা লিফলেট ছাড়ব, জনগণের কাছে পৌঁছাব। ড্যাবসহ অঙ্গসংগঠনগুলো এ বিষয়ে কাজ করবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সরকার দাবি করছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায়নি। আজকেই আইইডিসিআরের পরিচালক (মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা) বলেছেন যে যেকেনো মুহূর্তেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।’

খালেদার মুক্তির দাবিতে ১১ মার্চ বিক্ষোভ
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আবার দেখা করেছেন। তাঁরা বেরিয়ে এসে যেটা বলেছেন, তা আরও উদ্বেগজনক। এতটুকু তাঁর (খালেদা জিয়া) শারীরিক উন্নতি হয়নি, আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাঁরা যে কথাটি বলেছেন, এটা আরও উদ্বেগজনক যে তাঁকে আমরা ফিরে পাব কি না, এটা আমরা নিশ্চিত নই। এটা এত বেশি উদ্বেগের বিষয় যে গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’
মির্জা ফখরুল ১১ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের ঘোষণা দেন।

আজকের বৈঠকে মহাসচিবসহ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।