আকর্ষণ হারাচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত

কুয়াকাটা সৈকতে অবাধে চলে এসব যানবাহন। ছবি: প্রথম আলো
কুয়াকাটা সৈকতে অবাধে চলে এসব যানবাহন। ছবি: প্রথম আলো

পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের স্থান কুয়াকাটা। পর্যটনশিল্পকে বিকাশের লক্ষ্যে সরকার ২০০৬ সালে সেখানে নির্মাণ করে সৈকতলাগোয়া ইকোপার্ক। ২০১০ সালে এটিকে ‘কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হলেও পর্যটনবান্ধব করে একে সাজাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ইতিমধ্যে এ উদ্যানের দুই-তৃতীয়াংশ অংশ বিলীন হয়ে গেছে। ফলে পর্যটকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণ হারাচ্ছে কুয়াকাটা।

একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের বিরল সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। এ কারণেই এই সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিচরণ যেমন বেড়েছে, তেমনি একে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন মহলে জোর দাবি ওঠে। আধুনিক পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে বন বিভাগ এখানে ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে কুয়াকাটা, খাজুরা, গঙ্গামতী ও টেংরাগিরি (ফাতরা) মৌজার বনভূমিসহ ১৮ হাজার একর জমি নিয়ে সৈকতলাগোয়া ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। ২০০৬ সালে বন অধিদপ্তর থেকে ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কুয়াকাটা সৈকতলাগোয়া বন বিভাগের ১ হাজার ৩২০ একর জমিতে ইকোপার্ক নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

প্রকল্পের আওতায় চারদিকে ঝাউবাগানে ঘেরা ইকোপার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। পার্কের ভেতরে বিশ্রামের জন্য কিছু দূর পরপরই বসানো হয় বেঞ্চ। বেঞ্চের ওপর ছিল সিমেন্ট দিয়ে বানানো বিশাল ছাতা। ইকোপার্কের গহিন অরণ্যের মাঝখান দিয়ে ছিল একাধিক চলার পথ। পার্কের ভেতরে ছিল আঁকাবাঁকা মনোরম লেক। লেকের মাঝখানে চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয় কাঠের সেতু। পর্যটকেরা এই সেতু পার হওয়ার সময় দুই পাড়ের বনভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ, সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছের সমাহার দেখার সুযোগ ছিল সেখানে। এ ছাড়া লেকের দুই দিকে ছিল বাঁধানো ঘাট। এর স্বচ্ছ টলমলে পানির মধ্যে পর্যটকদের জন্য ছিল প্যাডেল বোট ব্যবহারের সুযোগ। বিশ্রামের জন্য লেকের মধ্যে বানানো হয়েছিল ছোট ছোট টংঘর।

এ ছাড়া ম্যানগ্রোভ এবং শোভাবর্ধনকারী গাছের বাগান, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নে কৃত্রিম বনভূমি সৃজনসহ ৪৭ হেক্টর বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক চারা রোপণ করা হয়েছিল। সৈকতে লাগানো হয় প্রায় ৭০০ নারকেলের চারা। কুয়াকাটায় বনভোজনে লোকজনের জন্য ছিল এই ইকোপার্ক ব্যবহারের সুযোগ। কিন্তু ইকোপার্কটি ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী সিডর ও ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর কুয়াকাটার ইকোপার্ককে ‘কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করা হয়। বন বিভাগ আবার নতুন রূপে জাতীয় উদ্যান সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। এ লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রকল্প আর অনুমোদনই হয়নি। থেমে আছে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পর্যটকদের জন্য বসার স্থাপনাগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে। সৈয়দ কাওসার নামে ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, জাতীয় উদ্যানের মধ্য দিয়ে চলাচলের পথের দুই পাশে সারি সারি গাছ এখনো সবার দৃষ্টি কাড়ে। তবে গাছ ও স্থাপনা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রয়েছে, যা সবার কাছেই বিরক্তিকর। জাতীয় উদ্যান নতুন করে সাজানো হলে কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনিসহ অন্য পর্যটকেরা।

অনুমোদের অপেক্ষায় মহাপরিকল্পনা

বন বিভাগ জানায়, কুয়াকাটার অদূরে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অর্থনৈতিক জোন স্থাপনসহ নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। এই অবস্থায় কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানে পুনরায় জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে এনে এবং অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি সমীক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কমিটির প্রথম সভা হয়েছে। এ বছরই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে বলে আশা করা যায়।