চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন: ২২০ প্রার্থীর ৬৯ জনই স্বশিক্ষিত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৭৯ জনই হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে আবার ৬৯ জনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তাঁরা স্বশিক্ষিত ও স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সিটি করপোরেশনের বর্তমান ছয় কাউন্সিলর তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, নগর ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ পরিচালনার জন্য শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবার ২২০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তবে তাঁরা আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

৩০ শতাংশ প্রার্থীই স্বশিক্ষিত

প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২২০ প্রার্থীর মধ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে মাত্র ১৪ জনের। আর স্নাতক পাস করেছেন ৫১ জন। এবার একমাত্র চিকিৎসক কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের নিয়াজ মোরশেদ। আর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী পুরকৌশলে স্নাতক। তিনি ২০১০ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। এ ছাড়া একমাত্র পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থী হচ্ছেন উত্তর কাট্টলীর নিছার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বর্তমানে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নেওয়া ৬৯ প্রার্থীর মধ্যে ৪৭ জনই স্বশিক্ষিত। বাকি ২২ জন নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে অক্ষর ও স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের সাতজন বর্তমানে কাউন্সিলরের দায়িত্বে রয়েছেন। হাইস্কুলের গণ্ডি পার হতে না পারা বাকি ১০ জনের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন ৬ জন, দশম শ্রেণি ৩ জন ও সপ্তম শ্রেণি ১ জন।

এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন যথাক্রমে ৩২ ও ৪২ প্রার্থী। একজন শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেননি।

যেসব ওয়ার্ডে স্বশিক্ষিতের প্রাধান্য

নগরের চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ১২ প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই স্বশিক্ষিত ও স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। তাঁদের মধ্যে হাইস্কুল পার হয়েছেন ৪ জন। পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ১১ প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন হাইস্কুলের গণ্ডি পার হতে পারলেও অন্যরা তা পারেননি। তাঁদের মধ্যে ৫ জন স্বশিক্ষিত ও ১ জন স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। অন্যজন অষ্টম শ্রেণি পাস। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চার প্রার্থীর মধ্যে দুজনই স্বশিক্ষিত।

সরাইপাড়া ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. সাবের আহম্মেদসহ চার প্রার্থীর তিনজনই স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। অন্যজন অবশ্য স্নাতকোত্তর। বকশিরহাট ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নুরুল হক হচ্ছেন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তাঁর বিপরীতে একমাত্র প্রার্থী অবশ্য আইনজীবী।  

ব্যতিক্রম জামালখান ওয়ার্ড

এই ওয়ার্ডে এবার আটজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনই স্নাতক ডিগ্রিধারী।  এই ওয়ার্ডের একমাত্র নারী প্রার্থী সুচিত্রা গুহ ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এমবিএও করেছেন তিনি। তাঁর এলএলবি ডিগ্রি রয়েছে।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না থাকলেও অন্য প্রার্থী উচ্চমাধ্যমিক পাস বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

একইভাবে পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের চার প্রার্থীর মধ্যে দুজনেরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। একজন প্রার্থী স্বশিক্ষিত হলেও অন্যজন স্নাতক পাস। এ ছাড়া আলকরণ ওয়ার্ডের চার প্রার্থীর তিনজনই উচ্চশিক্ষিত। অন্যজন স্বশিক্ষিত।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বেড়েছে

বর্তমান কাউন্সিলরদের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাই এবার নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তন হয়েছে।

গতবারের নির্বাচনে হলফনামায় নিজেকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমেদ ওরফে মানিক। এবার অবশ্য তিনি এসএসসি উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে হলফনামায় তথ্য দিয়েছেন।

সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীও এবার হলফনামায় দেখিয়েছেন, তিনি এইচএসসি উত্তীর্ণ। চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর গতবারের হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন তিনি এসএসসি পাস।

পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের গতবারের হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেন। তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে এবার তিনি বিএ পাস বলে তথ্য দিয়েছেন হলফনামায়। গতবারের আরেক স্বশিক্ষিত জিয়াউল হক সুমন এবার এসএসসি পাস বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ছালেহ আহম্মদ চৌধুরীর গতবারের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এসএসসি। তবে এবার তিনি তা এইচএসসি উল্লেখ করেছেন।

নিছার উদ্দিন আহমেদ গত নির্বাচনের আগে ছিলেন এমএ। এখন তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন, গতবার তিনি সনদ খুঁজে না পাওয়ায় স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছিলেন। পরে বোর্ড থেকে সনদ তুলেছেন। সে তথ্য এবার হলফনামায় দিয়েছেন। আরেক প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, গতবার নির্বাচনের আগে সবগুলো সনদ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে তিনি তথ্য গোপন করেননি। নির্বাচিত হওয়ার পর সনদগুলো উত্তোলন করেছেন।

‘শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন আছে’

নগর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম খুব জটিল হওয়ায় তা পরিচালনার জন্য লেখাপড়া জানা মানুষের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন করতে হলে লেখাপড়া জানতে হবে সংবিধানে এই রকম কোনো নিয়ম নেই। তবে নগর ব্যবস্থাপনা খুব জটিল কাজ। লেখাপড়া না জানা মানুষের পক্ষে তা ব্যবস্থাপনা করা কি সম্ভব? এই কারণে দেশের শহরগুলো আধুনিক হচ্ছে না।

পশ্চাৎমুখী চিন্তার মানুষ নগরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এটি বিবেচনায় নিচ্ছে না। নগরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে ফোরাম সে সিটি কাউন্সিলে অবশ্য শিক্ষিত মানুষ থাকা দরকার।