সাপ দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পদচারী–সেতুতে বেদেনিরা লোকজনকে আটকিয়ে সাপের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পদচারী–সেতুতে বেদেনিরা লোকজনকে আটকিয়ে সাপের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

‘কী যন্ত্রণা, জোর করে টাকা নেবে নাকি?’ মধ্যবয়স্ক জহিরুল ইসলাম কথাটি বলতেই তাঁকে উল্টো ধমক দিলেন ছয়জনের বেদে দলের সরদারনি, ‘এখানে-ওখানে ফুর্তি করতে টাকা ঢালতে পারো, আর আমরা চাইলেই যন্ত্রণা! টাকা দে, নইলে বাক্স থেকে সাপ বের করব। দে, মনসার মঙ্গলের জন্য টাকা দে।’

বেচারা জহিরুল বাধ্য হয়েই পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেন। ১০ টাকার একটি নোট এগিয়ে দেন। কিন্তু তাতে চলবে না বেদেদের দলটির। জহিরুলের মানিব্যাগের মধ্যে যে ৫০ টাকার নোট দেখে ফেলেছেন সরদারনি! ‘দে, ওই ৫০ টাকার নোটটা দে’—এই বলে মানিব্যাগে হাত দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। জহিরুল আর কী করবেন, অগত্যা ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে মানে মানে দ্রুত কেটে পড়লেন।

ঘটনাটা গত সোমবারের। ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের পদচারী–সেতুর ওপরের। পুরো ঘটনাটি দেখার পর এই প্রতিবেদকের কথা হয় জহিরুলের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এমন যন্ত্রণা মাঝেমধ্যেই পোহাতে হয়। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জহিরুল। থাকেন ওই এলাকাতেই। আর প্রায় প্রতিদিনই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের পদচারী–সেতুর ওপর সাপের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলতে আসে বেদেদের দলটি।

এই প্রতিবেদক আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঘটনা অবলোকন করেছেন। যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদেরও এই হয়রানির শিকার হতে হয় সেখানে। সেদিন আরেক যুবকের পথরোধ করে বেদেনিদের দলটি। তিনি অনেক অনুনয়-বিনয় করে বলেন, তাঁর কাছে টাকা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকেও ১০ টাকা আদায় করে ছাড়ে দলটি।

ওই যুবককে নিয়ে দলটি যখন টানাহেঁচড়া করছিল, এক পাশ দিয়ে প্রায় দৌড় দিয়ে চলে যান দুই শিশুসহ এক নারী। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জাহারাত জাহান নামের ওই নারীকে প্রায় প্রতিদিনই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ওই পদচারী–সেতুতে দুবার উঠতে হয়। আট বছরের ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যান তিনি। সঙ্গে থাকে আড়াই বছরের ছোট ছেলে। কোনো কোনো দিন বেদেনিদের নজর এড়িয়ে যেতে পারলেও মাঝেমধ্যেই হতে হয় টানাহেঁচড়ার শিকার। তাঁর আট বছরের স্কুলপড়ুয়া শিশুটিরও মুখ শুকিয়ে যায় সাপ দেখানোর ভয়ে।

পথে হাঁটতে হাঁটতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে অনেক পথচারীকেই বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। বেদেনিদের কবলে পড়েছেন তাঁদের অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বেশ বিরক্তও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই একজন পথচারী জানান, শুধু সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ই নয়, ফার্মগেট, শেওড়াপাড়া, জিগাতলা, সিদ্ধেশ্বরী, টিটিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেদেনিদের এমন দল আছে। তিনি মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজার এলাকায় এমন একটি দলের কবলে পড়েছিলেন। সাপ দিয়ে ভয় দেখানোর সময় একপর্যায়ে সেই সাপ তাঁর গায়ের টি–শার্টে ছোবল দিয়ে বসে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান তিনি। কিন্তু ওই বেদে নারী মুচকি হেসে বলেন, ‘ভয় পেয়েন না। এই সাপের বিষ নাই!’

ছিনতাইকারী, সালাম পার্টির ভয়ে অতিষ্ঠ নগরবাসীর কাছে এই সাপ পার্টিও ভীতিকর হয়ে উঠেছে।