ময়মনসিংহে কর্মজীবী নারীদের জন্য নেই সরকারি হোস্টেল

ময়মনসিংহ জেলা শহরটি বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর থেকে শহরে সরকারি–বেসরকারি অফিস স্থাপিত হয়েছে অনেক। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী কর্মীও আছেন অনেক। তাঁদের জন্য শহরে কোনো কর্মজীবী হোস্টেল নেই। তাই তাঁদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

সম্প্রতি শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী নারীদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার অনেক নারীবান্ধব। এ জন্য কর্মপরিবেশ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। কিন্তু এই শহরে তাঁদের থাকা–খাওয়ার জন্য ভালো মানের সুযোগ–সুবিধাসংবলিত কোনো সরকারি নারী হোস্টেল নেই। এ কারণে তাঁদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আরও নানা রকমের ঝামেলার মধ্য দিয়ে তাঁদের কর্মজীবন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

মাহমুদা আক্তার নামের একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহে এসেছেন। তাঁর স্বামী অন্য শহরে চাকরি করেন। আর তিনি ময়মনসিংহ শহরে একটি ভাড়া বাসায় মেস করে থাকেন। প্রতিদিন চাকরি করে বাজার করা ও রান্নার কাজ করতে হয়। যা অনেক কষ্টসাধ্য এবং এভাবে থাকতে গিয়ে খরচও বেশি হচ্ছে। সুযোগ–সুবিধাও অনেক কম। আরও অনেক সমস্যা তাঁদের পোহাতে হয়, যেগুলো খোলামেলা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকারি কর্মজীবী নারী হোস্টেল থাকলে তাঁদের এ ধরনের সমস্যা হতো না। সুযোগ–সুবিধা ও নিরাপত্তা বেশি থাকত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষিকা বলেন, ‘বাইরের মেসে থাকায় কোনো স্বাধীনতা নেই। মেসমালিকদের ইচ্ছানুযায়ী নানা বঞ্চনা ও কটু কথা সহ্য করে আমাদের থাকতে হয়। কী করব? এ ছাড়া এমন অনেক অবিবাহিত চাকরিজীবী নারী রয়েছেন, যাঁদের বাসা ভাড়া পাওয়া অনেক কঠিন এবং মেসে থেকে চাকরি করাটা আরও কষ্টসাধ্য। তাই আমাদের মতো কর্মজীবী নারীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

কর্মজীবী নারীদের এ ধরনের সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমন্বয়কারী আইনুন্নাহার বেগম বলেন, ‘এই শহরে একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা অতি জরুরি। বিষয়টি নিয়ে আমি কয়েকবার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। শহরে একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল না থাকায় মহিলাদের কাজে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক পরিবার থেকে অনীহা থাকায় এবং সামাজিক বাধা আসায় নারীর অগ্রগতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই শহরে দাপ্তরিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণকাজে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে অনেক নারী অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁদের জন্য নারীবান্ধব, মানসম্মত ও নিরাপদ আবাসনব্যবস্থা নেই। এ কারণে তাঁদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। কর্মজীবী নারীদের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’