পাহাড় কাটায় চবিকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে নির্বিচারে সাবাড় হচ্ছে গাছ। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় রাস্তা। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে জীববিজ্ঞান অনুষদের পেছনের পাহাড়ে। ছবি: সুজয় চৌধুরী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে নির্বিচারে সাবাড় হচ্ছে গাছ। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় রাস্তা। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে জীববিজ্ঞান অনুষদের পেছনের পাহাড়ে। ছবি: সুজয় চৌধুরী

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে পাহাড় কাটায় দুই ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে শুনানি শেষে অফিস আদেশের মাধ্যমে এ জরিমানা ধার্য করে অধিদপ্তর।

আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূসম্পত্তি (এস্টেট) শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহবুব হারুন চৌধুরী, নিরাপত্তা প্রধান মো. বজল হক, গাছ ব্যবসায়ী মো. হানিফ ও মো. বজল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা প্রত্যকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ব্যতীত পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা ৭ অনুযায়ী, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১২ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিবেশগত ক্ষতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৯ লাখ ৫ হাজার, মো. হানিফ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও মো. বজলকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরের সদর দপ্তর বরাবর টাকা জমা করতে হবে। পাশাপাশি আদেশে এ ধরনের অপরাধ না করার জন্য অঙ্গীকারনামা দাখিলে জন্য নির্দেশ করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করায় জরিমানা করা হয়। সাত কার্যদিবসের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘চার বছরে সাত হাজার গাছ সাবাড়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর দুদিন পর ক্যাম্পাসে সরেজমিন অভিযান চালিয়ে গাছ ও পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদল। ২৬ ফেব্রুয়ারি গাছ ও পাহাড় কাটায় জড়িতদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নোটিশ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূসম্পত্তি (এস্টেট) শাখা ও নিরাপত্তা দপ্তরকে। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশ হওয়ার একদিন পর পাহাড় ও গাছ কাটার বিষয়টি প্রতিরোধ করতে গঠিত কমিটির তিন সদস্য পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসের বনজ গাছপালা সংরক্ষণ ও গাছসহ যেকোনো ধরনের দ্রব্যাদি ক্যাম্পাসের বাইরে নেওয়া এবং নির্বিচারে গাছ কাটার বিষয়টি প্রতিরোধ করতে গত ২৯ জানুয়ারি এ কমিটি গঠন করা হয়।

পাহাড় থেকে কেটে রাখা হয়েছে গাছ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: প্রথম আলো
পাহাড় থেকে কেটে রাখা হয়েছে গাছ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: প্রথম আলো

কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসানকে। এতে সদস্য হন সহকারী প্রক্টর এস এম জিয়াউল ইসলাম, মোহাম্মদ রিফাত রহমান, সম্পত্তি (এস্টেট) শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহাবুব হারুন চৌধুরী, সেকশন অফিসার মো. বদিউল আলম ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তাঁদের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেন।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত চার বছরে ক্যাম্পাসের আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে অন্তত সাত হাজার গাছ কাটা হয়। গাছ নিতে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা।

নিয়মিত গাছ কাটা ও পরিবহনে যুক্ত শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিন্তু গত চার বছর ধরে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করার পর গাছ কাটার ঘটনা বেড়ে যায়। পাশাপাশি গত চার বছরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের মূল ফটক দিয়ে কাটা গাছ বের করার অনুমতি নেন মো. বজল নামে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর এলাকার এক ব্যক্তি। সবশেষ গত বছরের ৩১ অক্টোবর মো. বজল ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকের পাহাড়তলী এলাকা থেকে নিজের বাগানের গাছ দাবি করে দুই হাজার টুকরা আকাশি ও মেহগনি কেটে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেন। এই অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি (এস্টেট) শাখা ও নিরাপত্তা দপ্তর। এর আগে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি তিনি পশ্চিম দিকের নশাবনপাহাড়ি এলাকা থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেন। বজল ছাড়াও এই গাছ কাটায় জড়িত আছেন মো. হানিফ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে যুবলীগের নেতা দাবি করেন। যদিও যুবলীগের কোনো কমিটিতে তাঁর নাম নেই।