বিচারিক অনুসন্ধান: দুই সিটির আংশিক গাফিলতি, তবে এককভাবে দায়ী নয়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি প্রকোপের ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আংশিক গাফিলতি থাকলেও এককভাবে এই দুটি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা যায় না।

এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের মতামত অংশে এসব বলা রয়েছে। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদনটি এখন দাখিলের অপেক্ষায়।

ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। আজ সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি হলফনামা করা হয়েছে। যেদিন বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় আসবে, সেদিন প্রতিবেদনটি দাখিল করা হবে।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে,২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি প্রকোপের ক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আংশিক গাফিলতি থাকলেও এককভাবে এই দুটি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা যায় না। তা ছাড়া অনুসন্ধানকালে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি প্রকোপের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির একক কোনো গাফিলতি অনুসন্ধান কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়নি।’

গত ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। ঢাকার জেলা জজ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নন-এমন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের সমন্বয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অনুসন্ধান প্রতিবেদন এখন আদালতে দাখিলের অপেক্ষায়।

প্রতিবেদনে কমিটি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে। সুপারিশে বলা হয়, মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ সিটি করপোরেশনের হলেও সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ করা বাস্তবিক পক্ষেই কঠিন। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, পুলিশ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ, সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর, রিহাব ও বাড়ি মালিক সমিতি/কল্যাণ সমিতিসহ সকলের অংশগ্রহণে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করা ও জবাবদিহির আওতায় এনে তা বাস্তবায়ন করা। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মশক নিধন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।

সুপারিশে বলা হয়, প্রতি বছর প্রাক মৌসুমে তথা ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ও পূর্ণ মৌসুমে আবশ্যিকভাবে সিটি করপোরেশন মশার ঘনত্ব বিষয়ে জরিপ করবে। জরিপের ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করে ও প্রচারমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে আগে থেকেই সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া প্রতি দুই বছর পর পর মশার ওষুধের (কীটনাশক ও কেমিক্যাল) কার্যকারিতা পরীক্ষা করে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে; ব্যক্তি পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরি এবং মশক নিধনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু যাত্রা ও ২০১৯ সালের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও সিডিসি এর তথ্য মতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের অফিশিয়াল প্রাদুর্ভাব ছিল ২০০০ সালে। ওই বছরের পাঁচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু মহামারি রূপ ধারণ করে ২০১৯ সালে। সরকারি হিসেবে ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। বছরটিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৬৩ শতাংশ ও নারী ৩৭ শতাংশ। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক (২৭ শতাংশ) লোকের বয়স ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। এক বছরের কম বয়সী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে কম।

‘ডেঙ্গুতে মৃত্যু’ ও ‘রোগী ভর্তি’ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বর বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।