ভিক্ষা ছেড়ে ভ্যান চালান তাঁরা

৩০ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ভ্যানগাড়ি চালান শেরপুরের নালিতাবাড়ীর কিল্লাপাড়া গ্রামের আবদুর। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর   বাসভবনের কাছে।  ছবি: প্রথম আলো
৩০ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ভ্যানগাড়ি চালান শেরপুরের নালিতাবাড়ীর কিল্লাপাড়া গ্রামের আবদুর। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর বাসভবনের কাছে। ছবি: প্রথম আলো

মো. আবদুর রশিদ কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী। ৩০ বছর এলাকায় ভিক্ষা করেছেন। এতে তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে চলাটা ছিল কঠিন। অবশেষে স্ত্রীর সহযোগিতায় ও সন্তানদের ভবিষতের কথা ভেবে উপজেলার ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের আওতায় একটি ভ্যানগাড়ি চালানো আগ্রহ দেখান।

গত মাসে আবদুর রশিদ উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একটি ভ্যানগাড়ি পান। প্রতিদিন সেই ভ্যানগাড়ি চালিয়ে তিনি দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা উপার্জন করেন। এতে তাঁর সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা এসেছে। তাঁর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কিল্লাপাড়া গ্রামে।

শুধু আবদুর রশিদ নন, তাঁর মতো উপজেলার আরও একটি ইউনিয়নের আটজন ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে উপার্জন করছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা গড়তে জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব মরিচপুরান ইউনিয়নে শতাধিক ভিক্ষুককে অর্থ, কাপড় ও ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য আটটি ভ্যানগাড়ি দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা থেকে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ১ হাজার ২০০ ভিক্ষুকের সঙ্গে ইউএনও আরিফুর রহমান সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে মতবিনিময় সভা করেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিক্ষুকদের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক ভিক্ষুককে পাঁচটি করে মুরগি দেওয়া হয়। মুরগি পালনে সফল হলে ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাঁদের মধ্যে আগ্রহীদের ভ্যানগাড়ি বিতরণ, মুদির দোকান, চায়ের স্টল, ঠোঙা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহ করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এরই অংশ হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারি ইউএনও আরিফুর রহমান ভিক্ষুক রশিদের আগ্রহ দেখে ভ্যানগাড়ি দেন।

ভ্যানচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘আইজকাল ভিক্ষা তেমন পাওয়া যায় না। সারা দিনে যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসার চলে না। এতে কেউ সম্মানও করে না। তাই এখন ভ্যানগাড়ি চালাই। দিনে বেশ ভালাই কামাই অয়। বউ খুশি, পুলাপানও খুশি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, রশিদের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে। তিনি ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে ভ্যানগাড়ির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভ্যানগাড়ি নিতে স্ত্রী–সন্তানসহ এসেছিলেন। ভিক্ষা ছেড়ে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে রশিদ ভালোই আছেন। আশা করা যায়, ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচিতে সাড়া মেলায় দ্রুতই উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত করা যাবে।