নার্সদের জন্য মাত্র ১৫ গাউন ১৫ মাস্ক, জুতা-গ্লাভস নেই

জরুরি প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সেই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র কিছু শয্যা প্রস্তুত করা ছাড়া তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এমনকি এ ভাইরাসজনিত রোগটির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের ‘পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টসহ (পিপিই) অন্য কোনো যন্ত্রপাতিই নেই। যে কারণে শুধুমাত্র একটি ওয়ার্ড করা হলেও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকের মধ্যেই শঙ্কা কাজ করছে।

গতকাল মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ভবনে করোনা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এর আগে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওই একই জায়গায় ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছিল। সেখানে নিচতলার ৫-৬টি কক্ষে বেশ কিছু শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও কিছু শয্যা একটি কক্ষে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, ১০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। আরও ১০০ শয্যা করার সব রকম প্রস্তুতি আছে। করোনা ওয়ার্ডটি যেখানে করা হয়েছে, সেখানে যেতে হলে হাসপাতালের অর্থোপেডিক, গাইনি ও গ্যাষ্ট্রোলজি বিভাগের সামনে থেকেই যেতে হচ্ছে। গত সোমবার হাসপাতালের ওই ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছেন বিভাগীয় কমিশনার মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালে ১ হাজার ১৩৭ জন রোগী ভর্তি ছিল। দর্শনার্থী, স্বজন মিলিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালটিতে প্রায় ৫ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকও খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ কয়েকজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকে হাসপাতালের বাইরের কোনো একটি জায়গা খোঁজা হয় করোনা রোগীদের কোয়ারেন্টাইন রাখার জন্য। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের (বিভাগীয়) স্টেডিয়ামকে চিন্তা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই মাঠ পরিদর্শন করেন। কিন্তু জনবল, চিকিৎসাসামগ্রীসহ বিভিন্ন সংকট থাকায় হাসপাতালের পাশে আইসোলেশন ইউনিট বাইরে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান পরিচালক।

হাসপাতালের পরিচালক এটিএম এম মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স মিলিয়ে ২০ সদস্যের কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্ট কমিটি গত ৯ মার্চ গঠন করা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক শেখ আমির হোসেনকে সভাপতি এবং মেডিসিন ও রেসপিরিটরী মেডিসিনের চিকিৎসকদের ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী এখন কিছু আছে। বাকিগুলো পেয়ে যাব বলে আশা করছি।

হাসপাতালের উপ সেবা তত্ত্বাবধায়ক ( ডেপুটি নার্সিং সুপারিন্টেন্ড) আছমাতুন নেসা প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নেই বললেই চলে। এখানে ৩৮০ জন নার্স। ১৫টি মাত্র গাউন ও ১৫টি মাস্ক পাওয়া গেছে। কোনো গ্লাভস নেই, কোনো জুতা (সু) নেই, কিছু নেই। নিজ থেকে কেউ ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে কাজ করতে চাচ্ছে না। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ আমরা পাইনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া লিফলেটই ভরসা।

খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই সব হাসপাতালে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ শয্যার একটি করে ‘আইসোলেশন ইউনিট’ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকদেরও বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার খুলনা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে জেলা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা কমিটি মিলে মঙ্গলবার বড় করে সভা হয়েছে। জেলা র‌্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষও আছে। উপজেলায় দু-এক দিনের মধ্যে র‌্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হবে।