দল পারছে না, তাই পরিবারের চেষ্টা

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

কারাবন্দী খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির জন্য তাঁর দল বিএনপি, দলীয় আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যরা নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পথেই মুক্তির আভাস মিলছে না। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে দলের রাজনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে তাঁর মুক্তির জন্য পারিবারিক তৎ​পরতাই মুখ্য হয়ে উঠছে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার অবনতির কথা উল্লেখ করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফায় জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর সাময়িক জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর আগেও একবার তিনি উন্নত চিকিৎ​সার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন।

স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া জামিনের আবেদনটি ইতিমধ্যে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিটি পেয়েছি। আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’

>মানবিক কারণ দেখিয়ে বিদেশে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে: আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মতামত এলে বলতে পারব তাঁর (খালেদা জিয়া) ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। তবে তাঁর পরিবার প্যারোলে মুক্তি বা সাজা মওকুফের কথা আবেদনে লেখেনি। মানবিক কারণ দেখিয়ে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়েছেন।’

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের এই তৎ​পরতায় দলের অমত নেই। কারণ, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে উন্নত চিকিৎ​সার ব্যবস্থা করে খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় অথবা রাজপথে আন্দোলন গড়ে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার যে দুটি পথ খোলা ছিল, কোনোটিতেই তাঁরা সফল হতে পারেননি। এ অবস্থায় নেত্রীর কারামুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষের যেকোনো উদ্যোগেই দলের নীতিগত সমর্থন থাকবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া এতটাই অসুস্থ যে এখন তাঁর জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন এসে গেছে। আগে তাঁকে বাঁচাতে হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আইনগতভাবে তিনটি পথ খোলা আছে। একটি হলো আদালতের জামিন আদেশের মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সরকার মুক্তি দিতে পারে। তৃতীয় পথ হলো প্যারোল (শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি)। প্রথম দুটির ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্যারোলে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির আবেদন নিয়ে দলে ভিন্নমত আছে। এক পক্ষ প্যারোলে হলেও দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে আগ্রহী। অন্যরা এ ক্ষেত্রে কৌশলে এগোনোর পক্ষে। এ পক্ষটি মনে করে, খালেদা জিয়া নিজে বা দলের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে তা রাজনৈতিকভাবে একধরনের পরাজয় বা নতি স্বীকার হয়। তাই এ কাজটি দল সরাসরি করবে না। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলের আবেদন করলে তাতে দল অমত করবে না।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও হতে পারে।