বেতনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শিক্ষক

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনসিআরটিএ) সুপারিশে বিধি মোতাবেক নিয়োগ পাওয়ার সাড়ে তিন বছরেও কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না এক কলেজশিক্ষক। বেতন পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীষণ আর্থিক কষ্টে রয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম জিয়াউর রহমান। তিনি নওগাঁর সাপাহার উপজেলার চৌধুরী চান মোহাম্মদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি শাখায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চৌধুরী চান মোহাম্মদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভায় রেজল্যুশনের মাধ্যমে কলেজের এইচএসসি শাখার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভাষক পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই পদে শিক্ষক চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠায়। কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা জিয়াউর রহমানকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য এনসিআরটিএ সুপারিশ করে। এনসিআরটিএর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর জিয়াউরকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাওশি) কাছে এমপিওর (মাসিক বেতনের সরকারি অংশ) জন্য আবেদন করেন জিয়াউর। কিন্তু তাঁর এমপিওভুক্ত করার আবেদনটি মাওশি রাজশাহী শাখার উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেন।

জিয়াউর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কলেজের অনার্স শাখায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল হালিম এইচএসসি শাখায় এমপিওভুক্তির পদ সমন্বয় প্রাপ্তির আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করলে জনবলকাঠামো অনুযায়ী এমপিওভুক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য মাউশিকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি মাউশি।

শিক্ষক জিয়াউর বলেন, এনসিআরটিএর সুপারিশে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হলে বিষয়টি সমাধান করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। মাউশির প্রধান কার্যালয় ২০১৯ সালের ১১ জুলাই ও ১৭ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন দফা আবদুল হালিমের নিয়োগের বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মাউশি রাজশাহী শাখার উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি। 

শিক্ষক জিয়াউর আরও বলেন, শিক্ষানীতি ২০১৮–এর জনবলকাঠামো মোতাবেক অনার্স স্তরের সৃষ্টপদে নিয়োগ পাওয়া কোনো শিক্ষকের এইচএসসি কিংবা ডিগ্রি স্তরের এমপিওভুক্ত কোনো পদে সমন্বয় প্রাপ্তির আইনগত সুযোগ নেই। বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে ওই শিক্ষক কলেজের অনার্স শাখার সৃষ্টপদে নিয়োগপ্রাপ্ত। তদন্ত করে মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকৃত তথ্য পাঠালে তাঁর বেতন হয়ে যাবে। কিন্তু সেই কাজটাই এত দিনেও করছেন না মাউশির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে চৌধুরী চান মোহাম্মদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু এরফান আলী বলেন, আদালতে রিট করায় জিয়াউর রহমানের এমপিওভুক্ত চালুর বিষয়টি আটকে আছে। বিষয়টি অমানবিক হলেও এখানে কলেজ কর্তৃপক্ষের করার কিছু নেই।

যোগাযোগ করলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রাজশাহী শাখার উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাপাহারের কলেজটির দুই শিক্ষকের এমপিওভুক্ত জটিলতার বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হবে।