হেমনগর রেলস্টেশনে ট্রেন থামা ছাড়া সবই বন্ধ

স্টেশন থাকলেও লোকবলের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে স্টেশনের কার্যক্রম। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-জামালপুর রেলপথে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর স্টেশনে।  প্রথম আলো
স্টেশন থাকলেও লোকবলের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে স্টেশনের কার্যক্রম। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-জামালপুর রেলপথে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর স্টেশনে। প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-জামালপুর রেলপথে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর রেলস্টেশনের কার্যক্রম দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। স্টেশনটিতে ট্রেন থামলেও লোকবলের অভাবে টিকিট বিক্রিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ। এতে একদিকে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। অন্যদিকে লোকবল না থাকায় স্টেশনের সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছে।

রেলওয়ে বিভাগ সূত্র জানায়, যমুনা সার সরবরাহসহ যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরের এক জনসভায় সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এই রেলপথ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০০ সালে এর কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে রেললাইনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০১২ সালের ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনযাত্রার মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন।

৪২ কিলোমিটার এই রেলপথে চারটি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে গোপালপুরে হেমনগর রেলস্টেশনটি অন্যতম। উদ্বোধনের আড়াই থেকে তিন বছর স্টেশনটি চালু থাকলেও পাঁচ বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। হাবিবুর রহমান নামের একজন গেটম্যান ছাড়া কোনো জনবল নেই। ফলে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ধান শুকাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। স্টেশনটিতে নেই কোনো যাত্রীছাউনি। একটিমাত্র টয়লেট থাকলেও নেই কোনো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। লোকজনের বসবাস না থাকায় আবাসিক ভবন ময়লা-আবর্জনা ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষের মলমূত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে স্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয় লোকজন জানান, বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় রাতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে স্টেশনে। অপরাধীরা এসে আশ্রয় নেয় সেখানে।

>

অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে স্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি। চুরি হয়ে যাচ্ছে মালামাল।

রেলওয়ে বিভাগ সূত্র জানায়, এই রুটে চলাচলকারী একটি আন্তনগর ট্রেনসহ চারটি ট্রেন এ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ময়মনসিংহগামী বাহাদুরাবাদ এক্সপ্রেস ও ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে জামালপুরগামী আন্তনগর জামালপুর এক্সপ্রেস। টিকিট মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা এখান থেকে কোনো টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন না। এ স্টেশন থেকে ট্রেন ভ্রমণ করতে গেলে টিকিট আনতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরের ভূঞাপুর অথবা ১৫ কিলোমিটার দূরের সরিষাবাড়ী স্টেশন থেকে। স্থানীয় লোকজন নিজেরা গিয়ে, কখনো যানবাহনের চালকদের মাধ্যমে টিকিট কেটে রেখে এ স্টেশন থেকে ট্রেন ভ্রমণ করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এটি মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। স্টেশনটি দ্রুত চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার দাবি এলাকাবাসীর।

লেখক ও গবেষক মামুন তরফদার জানান, আবাদযোগ্য ভূমি চাষাবাদের অভাবে যেমন পরিত্যক্ত হয়ে যায়, এ স্টেশনের অবস্থাও তাই হয়েছে। মাদকসেবী আর অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে স্টেশনটি। স্টেশনটি চালু হলে এ অঞ্চলের যাত্রীদের খুব উপকার হবে।

হেমনগর ইউনিয়নের শামীম হাসান জানান, এই স্টেশন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু থাকলে এ অঞ্চলের মানুষ খুব সহজেই আন্তনগর ট্রেনে রাজধানী ঢাকা এবং টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলা শহরে সহজে যাতায়াত করতে পারত। সন্ধ্যার পর স্টেশনটি ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়। তাই এ স্টেশন থেকে কেউ ট্রেনে ওঠা–নামা করেন না।

পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মাসুম আলী খান জানান, লোকবলের অভাবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। লোকবল নিয়োগ করা হলে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।