কারাবাসের বদলে পড়তে হবে বই

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামিদের কারাদণ্ডের বদলে এক বছরের প্রবেশন দিয়েছেন মাগুরার দুটি আদালত। এর মধ্যে একটি মামলা পারিবারিক বিরোধ নিয়ে, অন্যটি মাদক সেবনের মামলা। এসব মামলায় আসামিদের কমপক্ষে তিন মাসের সাজা হতে পারত। তবে আসামিদের সংশোধনের সুবিধার্থে শর্ত সাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকার রায় দিয়েছেন আদালত।

গত সোমবার মাগুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক মোস্তফা পারভেজ মাদক সেবনের একটি মামলায় নয় আসামিকে এক বছর করে প্রবেশন দিয়েছেন। এই সময়ে তাদের প্রত্যেককে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চারটি বই পড়তে, দুইটি সিনেমা দেখতে এবং পাঁচটি গাছ লাগাতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার আসামিদের বাড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায়। ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর গাঁজা সেবনের অভিযোগে পুলিশ তাদের আটক করেছিল। এ সময় তাদের কাছে ৩২ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায়।

এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সংশোধনের জন্য শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের প্রবেশন দিয়েছেন আদালত। শর্ত গুলোর মধ্যে আছে—এই সময়ে মাদক সেবন, বিক্রি, বহনসহ মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখা যাবে না; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চারটি বই আনিসুল হকের ‘মা’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ও শাহরিয়ার কবিরের ‘একাত্তরের যিশু’ পড়তে হবে; ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ ও ‘ওরা ১১ জন’ নামের দুটি সিনেমা দেখতে হবে এবং দুটি বনজ ও তিনটি ফলদ গাছ লাগাতে হবে। পুরো সময় তাদের কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান করবেন একজন প্রবেশন কর্মকর্তা। তবে এই সময়ে কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের প্রবেশন বাতিল হয়ে তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

২ মার্চ পারিবারিক বিরোধের একটি মামলায় একই ধরনের রায় দেন মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান। ২০১৭ সালে মহম্মদপুর থানায় করা ওই মামলায় আসামি ২১ বছরের যুবককে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বদলে এক বছরের প্রবেশন দেওয়া হয়। ওই আসামিকেও প্রবেশনকালে বিচারক নির্ধারিত কিছু বই পড়া, সিনেমা দেখা ও গাছ লাগানোর নির্দেশ দেন।

মাগুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের সহকারী বিশেষ কৌঁসুলি (এপিপি) মোনতাছের বিল্লাহ টুটুল বলেন, দণ্ডের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়; বরং সংশোধন হওয়ার পথ করে দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে একজন সুনাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া। আসামিরা বয়সে তরুণ। তাদের কারাগারে পাঠালে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে অভ্যাসগত অপরাধীদের সঙ্গে মিশে পুরো অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ বিষয়ে মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মেহেতাজ আরা বলেন, প্রবেশনকালে প্রতি মাসে অন্তত একবার আসামিদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। তাঁকেও আসামিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে।