টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ২ রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত: র্যাব

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) জানিয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়েছে। র‍্যাব বলছে, নিহত দুজনই ডাকাত জকিরের অন্যতম সহযোগী। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কসংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর সমুদ্রসৈকতে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে।

র‍্যাব বলছে, দুজন রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা ডাকাত।

নিহত দুজন হলেন রামুর পূর্ব উমখালীর বাসিন্দা আবদুস শুক্কুরের ছেলে সাইফুল ইসলাম সোহেল ওরফে ডিবি সাইফুল (৩৮) ও টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার নয়াপাড়ার লেদা পশ্চিমপাড়ায় নুর আহমদের ছেলে নুর কামাল ওরফে সোনাইয়া (৩৪)।

র‍্যাব বলছে, ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ছয়টি গুলি, একটি একনলা বন্দুক, পাঁচটি তাজা কার্তুজ, দুটি গুলির খালি খোসা, ৪০ হাজার ৫০০ টাকা ও দুটি বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‍্যাব বলছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ র‍্যাবের তিনজন সদস্য আহত হন। তাঁরা হলেন সার্জেন্ট মোহাম্মদ হুমায়ুন, সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) আবু কাউসার ও হাবিলদার মোহাম্মদ খাইরুল।

র‍্যাব কক্সবাজার–১৫–এর জ্যেষ্ঠ পরিচালক ও টেকনাফ সিপিসি–১ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট (বিএন) মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কসংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর সমুদ্রসৈকত এলাকায় রোহিঙ্গা ডাকাত জকির বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। র‍্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে র‌্যাবের তিনজন সদস্য আহত হন। র‍্যাব পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে অনেকক্ষণ গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা গুলি করতে করতে পিছু হটে পালিয়ে যায়। র‍্যাব ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র গোলাবারুদসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে। দ্রুত টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাবের সদস্যরা পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ সাধারণ পোশাকে থাকা দুজনের হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। পোশাকে থাকা র‍্যাবের তিনজন সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত দুজনের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, নিহত সাইফুল বিভিন্ন এলাকা থেকে র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর পোশাক সংগ্রহ করার পাশাপাশি ডিবি পরিচয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম চালাতেন। অপরজন নুর কামাল সশস্ত্র ডাকাত দলের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্রের জোগান দিতেন। তাঁরা দুজনই রোহিঙ্গা ডাকাত জকির আহমেদের অন্যতম সহযোগী। গত ৩০ ডিসেম্বর র‍্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন নুর কামাল। ওই মামলায় নিহত দুজন আসামি ছিলেন। দুজনের লাশ পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় র‍্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।

২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর র‍্যাব, বিজিবি, পুলিশ, মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মানব পাচারকারী দালাল চক্র ও ডাকাত দলের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত চারজন নারীসহ শুধু কক্সবাজার জেলায় ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই নারীসহ ৭৬ জন রোহিঙ্গা।