ঢাকা থেকে ফরিদপুর যেতে লাগবে ১ ঘণ্টা

এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হচ্ছে আজ। গতকাল ভাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হচ্ছে আজ। গতকাল ভাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, উন্নয়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হয়েছে। এটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। আগে ঢাকা যেতে যে সময় লাগত এখন তার চার ভাগের এক ভাগ সময় লাগবে।

এক্সপ্রেসওয়েটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডর-১-এর অংশ। এটির ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এই দূরত্ব পার হতে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই সুফল পাওয়া যাবে। এই সময়ে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে কোনো টোলও দিতে হবে না।

জানতে চাইলে প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তফা বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়। বাকি ছিল যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার অংশের কাজ। চলতি মাসে এসে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কিছু কাজের জন্য ২০১৮ সালের জুনে ৪ হাজার ১১১ কোটি টাকার আরেকটি ডিপিপি অনুমোদন করে সরকার। এই ডিপিপি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। দুটি ডিপিপি মিলিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা। আট লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই এক্সপ্রেসওয়ের অনেকগুলো পয়েন্টে সংযোগ সড়ক থেকে ঢোকা এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই এটিকে পূর্ণাঙ্গ এক্সপ্রেসওয়ে বলা যাবে না। তবে এক্সপ্রেসওয়ে বা হাইওয়ের অনেকগুলো সুবিধা পাওয়া যাবে এতে। এ এক্সপ্রেসওয়ের মাঝবরাবর ৫ মিটার প্রস্থ রাখা হয়েছে। নির্মাণকাজ হয়েছে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী মোড়
থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।

এই এক্সপ্রেসওয়েতে সেতু ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু ২০টি ও আরসিসির ১১টি। নির্মাণ হয়েছে ৪৫টি কালভার্ট। এ ছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও ভাঙ্গা ফ্লাইওভার। এ ছাড়া জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও ভাঙ্গায়। এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোলপ্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুধীন সরকার বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর এই অঞ্চলের শুধু যোগাযোগব্যবস্থাই নয়, সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন। কর্মসংস্থানও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধিতে এই এক্সপ্রেসওয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।