এক্সপ্রেসওয়েতে বাধাহীন যাতায়াত

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ফাইল ছবি
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ফাইল ছবি

আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এটিই দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন।

এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এর সুফল ভোগ করা যাবে। এখন এ পথ অতিক্রম করতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ১২ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে হবে। ওই নৌপথ পাড়ি দিতে বিড়ম্বনা রয়েই গেছে। তারপরও এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ায় আনন্দিত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে যে যানবাহনগুলো এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করবে, তা মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় এসে ১২ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে যাবে। এরপর পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক চলার পর পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হবে। ওই নৌপথে প্রতিদিন ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার হয়। আর যাত্রী পারাপার হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে দুই লাখ। নৌপথ পারাপারের জন্য ১৬টি ফেরি রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ২৪ ঘণ্টাই ফেরি চলাচল করে। আর শুধু যাত্রী পারাপারের জন্য ৮৭টি লঞ্চ ও ২৫০টি স্পিডবোট রয়েছে। ফেরিতে যানবাহন পারাপার হতে সোয়া ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে। আর লঞ্চে ৪৬ মিনিট ও স্পিডবোটে ২০ মিনিট লাগছে।

ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত বাস চলাচল করে। ওই বাসের যাত্রীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করেন। নৌপথ পারাপার হয়ে তাঁরা কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে বাসে চড়ে বিভিন্ন জেলায় যান। ওই ঘাট থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল করে। তাঁরা এখন এক্সপ্রেসওয়ের সুফল ভোগ করবেন।

এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে সড়কের দুই পাশে ও সড়ক বিভাজকের ওপর নানা রঙের কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে। সাজানো হয়েছে যাত্রীবাহী বিভিন্ন পরিবহন।

বরিশাল থেকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে চলাচল করে জিএম পরিবহন। ওই পরিবহনের চালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ায় আমরা আনন্দিত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই মানুষ এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাচ্ছে। সকাল থেকেই মনটা আনন্দিত। সড়কে গাড়ি নিয়ে উঠলে মনে হয়, এ এক অন্য রকম দেশে আছি। গাড়ি চালাতেও আরাম লাগছে।’

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সিফাত মাহমুদ। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরে। তিনি সপ্তাহের ছুটি কাটাতে গ্রামে যাচ্ছেন। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে ও এর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বাড়ি যাব। এ কারণে ছুটি নিয়ে আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছি। যাত্রাবাড়ী থেকে ইলিশ পরিবহনে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছি, সময় লেগেছে ৪৫ মিনিট। স্পিডবোটে পদ্মা পার হতে সময় লেগেছে ২০ মিনিট। এখন বাসে বসে আছি, ভাঙ্গায় গিয়ে নামব। বুড়িগঙ্গা সেতু পার হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, এ এক অন্য উন্নত বাংলাদেশের যাত্রী আমরা। বাস দ্রুতগতিতে ছুটছে আর এত উন্নত ও সুন্দর সড়ক দেখে অভিভূত হচ্ছি।’

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের কাঁঠালবাড়ি ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, এখন নৌপথে চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। নাব্যতা–সংকটের কারণে ধীরগতিতে ফেরি চালাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে নৌপথটি পাড়ি দিতে। পদ্মা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত নৌপথের এ বিড়ম্বনা যাত্রীদের মেনেই চলাচল করতে হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুটি স্থলবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। বন্দরগুলোর সঙ্গে ঢাকা ও চট্রগ্রামে যাতায়াত করতে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ের কারণে যানজট থাকবে না। এ অঞ্চলের মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সুফল পাবেন।