করোনাভাইরাস থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিব বর্ষ, ২০২০ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। গণভবন, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিব বর্ষ, ২০২০ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। গণভবন, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিকভাবে নির্দেশনা অনুসরণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার দেশকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিব বর্ষ, ২০২০ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে এখানে হয়তো মৃতের সংখ্যা তেমন না, কিন্তু আতঙ্ক অনেক বেশি। কাজেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। ১১৪টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বাংলাদেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে বলব, সচেতন থাকা দরকার। আমরা সব সময় বুলেটিন দিয়ে যাচ্ছি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)  মাধ্যমে সব সময় জানানো হচ্ছে, সেগুলো অনুসরণ করবেন। নিজেরা সচেতন থাকব, অপরকে সচেতন করব।’ তিনি বলেন, ‘এই সচেতনতামূলক যে সমস্ত নির্দেশনা আসছে, সেটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা কিন্তু আমাদের দেশকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারব।’

করোনাভাইরাস বিষয়ে কারও যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, সেটা লুকিয়ে না রেখে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যদি কেউ কখনো মনে করেন যে কেউ এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা তার কোনোরকম নমুনা দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের নিজস্ব উদ্যোগেই নিজেদের ‘কোয়ারেন্টাইনে’ থাকারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘যাঁরা বিদেশ থেকে আসবেন, তাঁরা নিজেরা অন্তত বাইরের কারও সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এই ধরনের রোগের কোনোরকম লক্ষণ দেখা যায় কি না, খেয়াল করবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।’

দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং চিকিৎসাধীনদের স্বাস্থ্যের উন্নতির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা বিদেশ থেকে আসা আমাদের দুজন নাগরিককে শনাক্ত করেছি (করোনাভাইরাসে আক্রান্ত)। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে, তারা মোটামুটি ভালো এবং একজন সংক্রমিত হয়েছিল। এ ছাড়া বাকি সবাই ভালো আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ খুব অসচেতন। তারা যেখানে সেখানে থুতু ফেলছে। টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করে যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলছে। বাইরে থেকে ঘরে এসে হাত না ধুয়ে ছেলেমেয়েকে স্পর্শ করছে, বিভিন্ন কিছু করছে।’ তিনি বলেন, ‘যে যে কাজগুলো করলে তার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় সে কাজগুলো করবেন না। যেখানে সেখানে কফ, থুতু ফেলবেন না। হাঁচি–কাশি দিলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করবেন। নিজে ভালো থাকবেন, অপরকে ভালো রাখবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব, হাঁচি-কাশি আসলে আপনারা হাতের তালুতে না নিয়ে কনুইয়ের মাধ্যমে করেন। হাত মেলানো, কোলাকুলি করা বা কাউকে জড়িয়ে ধরা—এগুলো সব বন্ধ রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। কখন কার মধ্যে যে এই রোগ আছে, কার মাধ্যমে চলে আসে এটা কেউ বলতে পারে না।’

যানবাহনে ময়লা রাখার জন্য ঝুড়ি বা থলে রাখার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমাদের সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিজেরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি, তাহলে আমরা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব। আর আমাদের পবিত্র ধর্মেও রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা।’ তিনি বলেন, ‘নিজেরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকেন, তাহলে আশপাশের মানুষগুলো ভালো থাকতে পারবে না। রোগ-শোক, বালাই এগুলো সব সময় দেখা দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করব এবং অপরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব। ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। নিজের কাজ নিজে করতে কোনো লজ্জা নেই।’ তিনি বলেন, বিদেশে কাজের কোনো লোক নেই এবং তারা অনেক উন্নত দেশ হলেও নিজের কাজ নিজেরাই করে থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে চলতে চাই। আর সেটা করতে গেলে আমাদের দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। যে কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজন।’ বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এটা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এখনো ভালো আছে, ঘাবড়াবার কিছু নেই।

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ সরকারের দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। পিএমওর এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেসসচিব ইহসানুল করিমও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে রাজশাহী সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এবং যশোর পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী যশোরের মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং রিসাইকেল ব্যবস্থা গড়ে তুলে গ্যাস উৎপাদন প্রকল্প চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর সরকার সিটি করপোরেশনগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মেয়রদের নিজ নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান।