বিএনপির প্রার্থীদের নামে বেশি মামলা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৭১ প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ১টি থেকে ১৮টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে প্রার্থীদের নামে। বিএনপির ৪০ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জনই মামলার আসামি। তবে আওয়ামী লীগে মামলার আসামি মাত্র চারজন। বাকিরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএনপির প্রার্থীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য তাঁদের নামে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ মামলার কোনো ভিত্তি নেই। মামলায় জামিন নিয়ে তাঁরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।

বিএনপির ২৯ জনই আসামি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। বিএনপি এবার প্রথমবারের মতো প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে। তবে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী গত রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এই ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বাকি ৪০ কাউন্সিলরের মধ্যে ২৯ জনই এক বা একাধিক মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে ২৬টি মামলা রয়েছে লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এরপর ১৮টি মামলা রয়েছে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের প্রার্থী আবদুস সাত্তার সেলিমের নামে। আর ১৫টি করে মামলা রয়েছে গোসাইলডাঙার মো. হারুন ও দক্ষিণ হালিশহরে সরফরাজ কাদেরের নামে। পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলমের নামে ১৩টি এবং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম ও দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের হানিফ সওদাগরের বিরুদ্ধে ৮টি করে মামলা হয়েছে। ৭টি মামলা রয়েছে পশ্চিম ষোলশহরের প্রার্থী ইসকান্দর মির্জার নামে।

ঘটনাস্থলে না থাকলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুবুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এসব গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছিলেন, ওই সময়ে নাশকতার অভিযোগে একটি ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়। এসব মামলার কারণে আদালত থেকে জামিন নিতে হচ্ছে। আর পুলিশের হয়রানি তো আছেই।

>আওয়ামী লীগে মামলার আসামি মাত্র চারজন
বিএনপির ৪০ প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জনের নামে মামলা
বিএনপির দাবি, বেশির ভাগই রাজনৈতিক

ছয়টি করে মামলা আছে চকবাজার ওয়ার্ডের এ কে এম সালাউদ্দিন কাউসার ও দক্ষিণ পতেঙ্গার মো. নুরুল আফছারের বিরুদ্ধে। উত্তর কাট্টলীর রফিক উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ বাকলিয়ার ইয়াছিন চৌধুরী, উত্তর হালিশহরের বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবুল হাশেম এবং উত্তর মধ্যম হালিশহরের মো. ওসমানের নামে পাঁচটি করে মামলা রয়েছে। আলকরণ ওয়ার্ডের দিদারুর রহমান চার মামলার আসামি। 

চকবাজার ওয়ার্ডের এ কে এম সালাউদ্দিন কাউসার বলেন, এসব মামলা কেন দেওয়া হয়েছে, তা সবাই জানেন। শুধু বিএনপি করার কারণে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নামে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রাখার কৌশল হিসেবে এসব মামলা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মাত্র ৪

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মোহরা ওয়ার্ডের কাজী মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও দক্ষিণ পতেঙ্গার ছালেহ আহম্মেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। পশ্চিম ষোলশহরের মো. মোবারক আলীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান। তিনি ১১টি মামলা থেকে খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন। লালখান বাজার ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল তিন মামলার আসামি।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলীর বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি খুন ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাবের আহম্মেদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মহিউদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে।

প্রার্থীদের নামে মামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, হলফনামায় মামলার তথ্য দেওয়ার কারণে জনগণ প্রার্থীদের সম্পর্কে একটা ধারণা পান। আবার রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো মামলা করা থাকলে তা এলাকাবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারেন প্রার্থীরা। প্রয়োজনে ব্যাখ্যাও দিতে পারেন। তখন ভোটাররা তা বিবেচনা করবেন।