বিত্তে সাংবাদিকদের কেউ কেউ ওপরে উঠেছেন, চাটুকারিতাও অনেক: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাংবাদিক নেতাদের দু-একজন বিত্তের দিক থেকে অনেক ওপরে উঠে গেছেন। এ পেশায় চাটুকারিতাও এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে পেশাদার চাটুকাররা লজ্জা পায়।

আজ শুক্রবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সংবাদপত্র এখন সংবাদকর্মীদের হাতে নেই, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। নিজেদের ব্যবসা রক্ষার জন্য সরকারের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় তাদের নেই। তিনি আরও বলেন, ‘যে কারণে আমরা সেলফ সেন্সরশিপ দেখছি। সম্পাদক সাহেব নিজেই বলেন যে এটা নেওয়া যাবে না, দেওয়া যাবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে চাটুকারিতা এমন এক পর্যায় চলে গেছে বাংলাদেশে, সেখানে দেখবেন যে প্রফেশনাল চাটুকার যারা আছে, তারাও লজ্জা পায়। দিজ আর ফ্যাক্ট।’

সরকার সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকেরা) আরও ভালো জানেন, কীভাবে ধীরে ধীরে একেকটি আইন তৈরি করে আপনারা (সাংবাদিকেরা) যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যান, যেন সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে না পারেন, তার ব্যবস্থা তারা করেছে।’

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া, সাংবাদিক গুম হওয়া এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিজেদের ছোটখাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে এক হয়ে আন্দোলন করে জনগণকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের দুই-একজন সাংবাদিক নেতা তাঁরা এখন অনেক ওপরে উঠে গেছেন বিত্তের দিক থেকে।’ একটি বিদেশি দূতাবাসের অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি সেখানে একজন সাংবাদিক নেতার গাড়ি দেখেছিলেন, যেটায় মিলিয়নিয়ার ছাড়া কেউ চলে না। তিনি আরও বলেন, এ অবস্থার জন্যই চাটুকারিতা বাড়তে থাকে।

সাংবাদিকদের মাধ্যমে অনেক অনিয়মের খবর পেয়ে থাকেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকেরা সুযোগ পেলে আসল চিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি উদাহরণ হিসেবে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ব্যাংক লুটপাটসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সত্যিকার অর্থে যে তাঁদের ভূমিকা জনগণ আশা করে, সেটা সব সময় সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ একটাই, এ দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের কোনো অধিকার নেই।

খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি এত অসুস্থ যে তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকার তাঁকে মুক্ত করছে না। বিচার বিভাগ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে ভিন্নভাবে রায় দেবে তাদের (সরকার) ইচ্ছার বাইরে গিয়ে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক বাধা আসছে, আসবে, অনেককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হবে। আমরা আশা করি, জনগণের যে যে লড়াই, জনগণের যে সংগ্রাম, সেই লড়াই-সংগ্রামে সাংবাদিকেরা সব সময় সামনের দিকে ছিলেন, আজকেও তাঁরা এই লড়াই-সংগ্রামে সামনের দিকে থাকবেন।’

করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। আমাদের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটা ছড়িয়ে পড়া—এটা মারাত্মক মহামারি শুরু হয়েছে। সচেতনতার মধ্য দিয়ে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে।’

ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর নেতা শফিকুল ইসলাম, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।