বালু ফের গড়িয়ে যাবে ব্রহ্মপুত্র নদে

ব্রহ্মপুত্র খননের বালু রাখা হয়েছে কিনারে। বর্ষাকাল এই বালু আবার নদে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা। সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরের থনার ঘাট এলাকায়।
ব্রহ্মপুত্র খননের বালু রাখা হয়েছে কিনারে। বর্ষাকাল এই বালু আবার নদে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা। সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরের থনার ঘাট এলাকায়।

ময়মনসিংহ শহরের কাচারি ঘাট এলাকা থেকে কালীবাড়ি ঘাট পর্যন্ত আনুমানিক দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র খননের বালু ও মাটি ফেলা হচ্ছে। খননস্থল থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বিশাল আকারে মাটির স্তূপ করা হচ্ছে।

বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগে যদি মাটি সরানো না হয়, তাহলেও ওই মাটি বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবার নদে নামবে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার আগেই ওই মাটি সরিয়ে নেওয়া হবে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওই মাটি নেওয়ার কথা রয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র নদ খননকাজটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এই প্রকল্পে ব্রহ্মপুত্রের মোট ২২৭ কিলোমিটার খনন করা হবে। জামালপুরে ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার টোক পর্যন্ত এই ২২৭ কিলোমিটার অংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। খননকাজটি দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ময়মনসিংহের ৯০ কিলোমিটার নদ খনন করা হবে। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে এই ৯০ কিলোমিটারের খনন শেষ হওয়ার কথা।

খনন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদে মোট ৯৫ লাখ ঘনমিটার খনন করা হয়েছে; যা প্রথম বছরের লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৮০ ভাগ। চলতি বছরের জুন মাসে খননের এক বছর শেষ হবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ নগরের কাচারি ঘাট এলাকা থেকে কালীবাড়ি ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশে তিনটি স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজ চলছে। খননের মাটি ওই এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বিশালাকার স্তূপ করে জমা করা হচ্ছে। মাটির স্তূপ ঘিরে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বর্ষাকাল না এলেও সম্প্রতি এক দিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এপ্রিল মাস থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। গত বছরের বর্ষার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা বলেন, ভরা বর্ষায় পানি শহর রক্ষা বাঁধ পর্যন্ত ওঠে। ওই সময় মাটির স্তূপ পানির নিচে তলিয়ে থাকবে। স্রোতের টানে মাটির স্তূপ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে খননের বালু স্তূপ করে রাখায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ খনন নিয়ে ময়মনসিংহের মানুষের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু খননের বালু যেভাবে নদের কিনারে স্তূপ করা হচ্ছে, তাতে খননের উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খনন কর্তৃপক্ষের কাছ দাবি, দ্রুত মাটির স্তূপ সরিয়ে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদকে রক্ষা করা হোক।

খনন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ওই মাটি নিজেদের প্রয়োজনে নেবে বলে জানিয়েছে। মাটি নেওয়ার তালিকায় রয়েছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যাময়ীর প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠের প্রয়োজনে আমরা মাটি চেয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছিল, বিদ্যালয় থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি দূরত্বে যখন খনন চলবে, তখন আমাদের মাটি দেওয়া হবে। এখন আমরা মাটির জন্য বারবার যোগাযোগ করছি।’

খনন প্রকল্পের পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার আগেই মাটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে মাটি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে জেনেছি।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কান্তি বসাক বলেন, ‘বর্ষাকাল আসার আগেই মাটি সরিয়ে নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মাটি নিতে আগ্রহী—এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা এপ্রিল মাসের আগে মাটি নিতে বলেছি।’