লবণ বিক্রি হচ্ছে কেজি তিন টাকায়

কক্সবাজারের চৌফলদন্ডিতে মাঠে উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। গতকাল দুপুরে।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের চৌফলদন্ডিতে মাঠে উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। গতকাল দুপুরে। প্রথম আলো

শিল্পমন্ত্রীর আশ্বাস, চাষিদের সমাবেশ ও সরকারি কর্তাদের দফায় দফায় বৈঠকেও লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ হয়নি। কক্সবাজার উপকূলে লবণের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৮ থেকে ১২ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩ টাকায়।

চাষিরা বলছেন, মৌসুমের বাকি আছে মাত্র দেড় মাস। এ সময়েও লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত নাহলে চাষি পরিবারে নেমে আসবে আর্থিক বিপর্যয়। লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুমে লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করতে করতে জেলার অন্তত ৪৪ হাজার প্রান্তিক চাষির পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকে লবণ উৎপাদন বন্ধ রেখে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন।

মাঠের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে দুই দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডিতে বিসিকের পাইলট প্রকল্প ও লবণমাঠ পরিদর্শন করেন। কথা বলেন লবণ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সেখান থেকে লবণশিল্প নগর ইসলামপুরে বিভিন্ন লবণ মিল ঘুরে দেখেন তিনি ।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে তিনি কক্সবাজার শহরের হিলটপ সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, লবণশিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। কীভাবে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন তিনি। লবণেচাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আগামী মৌসুমে চাষিদের মাঠে নামানো যাবে না। লবণ যেন পেঁয়াজের মতো না হয়। 

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সিন্ডিকেট ও দালাল শ্রেণির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে লবণ খাত। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখনো লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়নি।

এর আগে ৬ মার্চ কক্সবাজারে শহীদ দৌলত ময়দানে লবণচাষি সমাবেশে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে লবণ বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মাঠের পরিস্থিতি দেখতে আসেন বিসিকের চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসানও।

গতকাল সকালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ও চৌফলদন্ডি উপকূলে গিয়ে দেখা গেছে, উৎপাদিত লবণ তুলে চাষিরা স্তূপ করে রাখছেন।

 স্থানীয় চাষি সুলতান আহমদ ও নজিব মিয়া বলেন, এক কেজি লবণ উৎপাদন করতে ৮-১২ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে তিন টাকায়। তাই লবণ বিক্রি হচ্ছে না।

একইভাবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলার চাষিরাও লোকসান দিয়ে বিক্রি করছেন লবণ।

পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ বলেন, প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এর মধ্যে দালালসহ নানা খাতে খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১০-১৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে লবণের মণপ্রতি দাম পড়ছে ১০৫-১১০ টাকা।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রতি মণ লবণ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও ফেব্রুয়ারি মাসে দরপতন শুরু হয়। তখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। আর চলতি মার্চ থেকে মণপ্রতি লবণের দাম চলছে ১২০ টাকা।