ভাইদের শক্তিতে মাঠ দখল করার চেষ্টায় আউয়াল

পিরোজপুরে সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সড়কে অবরোধ। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
পিরোজপুরে সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সড়কে অবরোধ। প্রথম আলো ফাইল ছবি।

বছর তিনেক আগেও পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের সর্বেসর্বা ছিলেন সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল। নানা বিতর্কে জড়িয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। নিজের ভাইদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে রাজনীতিতে পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এখন ভাইদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে তাঁদে​র​ শক্তি–সামর্থ্যকে ব্যবহার করে আবার মাথাচাড়া দিতে চাইছেন আউয়াল।

এ কে এম এ আউয়াল নিজে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আউয়ালের এক ভাই হাবিবুর রহমান (মালেক) জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পিরোজপুর পৌরসভার মেয়রও তিনি। তাঁদের আরেক ভাই মজিবুর রহমান (খালেক) জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সবার ছোট ভাই মসিউর রহমান (মহারাজ) পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং যুবলীগের সাবেক নেতা। মসিউর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ​ছিলেন, সম্প্রতি বাদ পড়েছেন।

একটা সময় পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই পরিবার ছিল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। যার নেতৃত্বে ছিলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আউয়াল। দুই মেয়াদে সাংসদ থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, কমিশন নেওয়া, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া, সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে দখলে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল। তাঁর আপন ভাই হাবিবুর রহমানও প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আউয়াল টাকা ছাড়া কিছু বোঝেন না।

>

একটা সময় পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এই পরিবার ছিল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা
নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক সাংসদ আউয়াল

২০১৬ সালের জুনে বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর টোল আদায়ের ইজারাকে কেন্দ্র করে আউয়ালের সঙ্গে মেজ ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমানের বিরোধ শুরু হয়। অন্য ভাইয়েরা ছিলেন হাবিবুরের সঙ্গে। অন্য ভাইদের সঙ্গে বিরোধের জেরে এলাকার রাজনীতিতে প্রায় প্রভাবশূন্য হয়ে যান আউয়াল।

এ সময়টাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়ান তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি হাত মেলান পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে। পরে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দুজনের মধ্যেও বিরোধ তৈরি হয়। হাবিবুরের প্রভাবও কমতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের পারিবারিক প্রভাব ঠিক রাখতে এক হয়ে যান আউয়াল, হাবিবুরসহ অন্য ভাইয়েরা।

সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

এখন ভাইদের কাঁধে ভর দিয়ে আবার মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছেন আউয়াল। সম্প্রতি আউয়াল দম্পতির জামিনকে কেন্দ্র করে যে শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে, তা মূলত হাবিবুর রহমানের সমর্থনে হয়েছে। আগামী এপ্রিলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। আবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাইছেন আউয়াল। মন্ত্রী শ ম রেজাউলকে কোণঠাসা করে রেখে আবার নিজেদের একক পারিবারিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে এই পরিবারটি।

এ কে এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইদের মধ্যে কিছু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু পানি যেমন কাটা যায় না, তেমনি ভাই ভাই আলাদা থাকা যায় না। এখন আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই।’ আগামী সম্মেলনে আবার সভাপতি হতে চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউন্সিলররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁকে পদে অধিষ্ঠিত করেছেন।

আউয়াল পরিবারের হাতে দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি বন্দী। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে কানাঘুষা থাকলেও তাদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। শ ম রেজাউল করিমকে ঘিরে দলের একটি অংশ তৎপর হলেও এখন তাঁদের কোণঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছে আউয়াল পরিবার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, আউয়াল জানান দিতে চেয়েছেন যে, পিরোজপুরের আওয়ামী লীগে তাঁরাই সর্বেসর্বা। আউয়ালের সেজ ভাই পিরোজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘এখানে ষোলো আনাই আমাদের।’ আউয়ালের আরেক ভাই হাবিবুর রহমানের দাবি, আধিপত্য বিস্তার বা ক্ষমতা দেখানো নয়, মানুষের সেবা করা তাঁদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য।