বসতভিটার পরিত্যক্ত জায়গায় চায়ের চাষ

বালাপাড়ায় চা–গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক। সাম্প্রতিক ছবি।  প্রথম আলো
বালাপাড়ায় চা–গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

একসময় যে গ্রাম দুটির বসতভিটা ছিল পরিত্যক্ত, এখন সেই গ্রামের পরিত্যক্ত জায়গায় চোখে পড়ে চায়ের গাছ। চার বছর ধরে ওই গ্রাম দুটির অনেকে বসতভিটার পরিত্যক্ত জায়গায় চা চাষ করে বাড়তি আয় করছেন।

ওই গ্রাম দুটি হলো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের বালাপাড়া ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলি ইউনিয়নের বাহাগিলি।

ওই গ্রাম দুটির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, চার বছর আগেও গ্রাম দুটির বসতভিটার পরিত্যক্ত অংশ খালি পড়ে ছিল। ২০১৩ সালে বালাপাড়া গ্রামের পাশে সিনহা অ্যাগ্রো বেইজড নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪ একর জমিতে চা চাষ করে সফল হওয়ায় ওই গ্রামের পাশাপাশি বাহাগিলি এলাকায়ও ১২ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করে ওই প্রতিষ্ঠান। আর ওই প্রতিষ্ঠানের দেখাদেখি গ্রাম দুটির অনেকে পরিত্যক্ত জায়গায় চা চাষ করে বাড়তি আয় করছেন।

বাহাগিলি গ্রাম প্রবেশ মুখে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি। বাড়ির পাশে লাগানো চা-গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগোত বাড়ির পাশোত ৫০ শতক জমিত ৩০ হাজার টাকা খরচ করি ৩ হাজার ৩০০টা চায়ের গাছ নাগাছুং। দুই বছর পর ওই জমির চা-পাতা বেচে প্রত্যক বছরে ৮০ হাজার টাকা পাওছুন।’

বালাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ ময়না খাতুন বলেন, ‘বাড়ির পাশোত পরিত্যক্ত জাগাত চায়ের গাছ নাগাছি। সেই গাছের চা-পাতা বেচে তেল-সাবানের খরচ চালেও কিছু জমা করুছি।’

চায়ের গাছে সেচ দিচ্ছেন বাহাগিলি গ্রামের শিক্ষিত যুবক এনামুল হক। তিনি বলেন, চা চাষে কোনো ঝামেলা নেই। নেই পরিশ্রম। চা চাষ অত্যন্ত সহজ ও লাভজনক। যেসব জমিতে অন্য কোনো ফসল হয় না, সেসব জমিতে সহজে চায়ের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। প্রতিটি চা-গাছ থেকে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত পাতা পাওয়া যায়। খরচ বাদে প্রতি একরে চা চাষ করে বছরে এক লাখের বেশি টাকা আয় করা যায়।

বালাপাড়া গ্রামের পাশে লাগানো চা-বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে পরিচর্যার কাজ তদারকি করছেন সিনহা অ্যাগ্রো বেইজের ব্যবস্থাপক রিফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বালাপাড়া ও বাহাগিলি গ্রামের লোকদের সহযোগিতায় আমরা ১৬ একর জমিতে চা চাষ করছি। আর তাই ওই গ্রাম দুটির যাঁরা চা চাষ করতে আগ্রহী ছিলেন, আমরা তাঁদের চা-গাছের চারা এনে দিতে সহযোগিতা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের কিশোরগঞ্জের খামার সহকারী জাহেদ ঈমাম বলেন, প্রতি একরে চায়ের চারা লাগে ৬ হাজার ৮০০। প্রতিটি চারা ৫-৬ টাকায় কিনতে হয়। ১৮ ইঞ্চি গভীর, চারদিকে ১২ ইঞ্চি প্রস্থ করে গর্ত খুঁড়তে হয়। প্রতি গর্তে ২ কেজি পচা গোবর, ১০ গ্রাম টিএসপি, ৩ গ্রাম পটাশ, ২ গ্রাম দানাদার কীটনাশক দেওয়ার ১৫ দিন পর চারা লাগাতে হয়। বছরে ৫টি সেচ দিতে হয়। সব মিলিয়ে এক একর জমিতে চারা লাগাতে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। দুই বছর পর থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করা যায়। বছরে এক একর জমিতে লাগানো গাছ থেকে ১০ হাজার কেজি চা-পাতা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি পাতা ১৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ চা-পাতা কিনে নিয়ে যায় পঞ্চগড়ে অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল সেন্ট্রাল টি ইন্ডাস্ট্রিজ নামের প্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, চা একটি জনপ্রিয় পানীয়। এর চাহিদা সর্বজনে। তারাগঞ্জের মাটিতে চা চাষ হচ্ছে। অন্য এলাকায় গাছ লাগানোর তিন বছর পর চা-পাতা সংগ্রহ করা হলেও তারাগঞ্জে চারা লাগানোর দুই বছরের মাথায় পাতা সংগ্রহ করা যাচ্ছে।