তাঁরা নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন ধার-দানে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আলকরণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলেমান এবারও নির্বাচন করছেন। বছরে তাঁর আয় পৌনে ১৮ লাখ টাকা। হাতে নগদ আছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিপুল আয়ের পরও তিনি নির্বাচন করবেন ধার ও দানের টাকায়। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যে ৭০ হাজার টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করবেন। বাকি ৫০ হাজার টাকা দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ধার ও দান হিসেবে নেবেন।

তারেক সোলেমানের মতো ধার ও দানের টাকায় নির্বাচন করছেন অন্তত ৯৩ কাউন্সিলর প্রার্থী। ভাই, বোন, স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, শালা-সম্বন্ধী, ভগ্নিপতিসহ আত্মীয়স্বজন, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও ধার করবেন। পাশাপাশি দানও নেবেন। তবে ৫৭ প্রার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এবারের নির্বাচনে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫০ জনের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব পাওয়া গেছে।

প্রার্থীরা পোস্টার, প্রচারপত্র ও ব্যানার ছাপানো, নির্বাচনী ক্যাম্প, বৈঠক, আপ্যায়ন ব্যয়সহ অন্তত ১৬টি খাতে টাকা খরচ করতে পারেন। নির্বাচনী হলফনামায় কোন খাতে কত টাকা খরচ হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে হয়। আবার এই টাকা কোথা থেকে আসবে, তারও উৎস জানাতে হয় নির্বাচন কমিশনকে।

বিপুল আয়ের পরও ভরসা ধার ও দানে

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী নগরের পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল কাদেরের ব্যবসা, সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন খাত থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ২৮ লাখ টাকা। এবার তিনি নির্বাচনে ব্যয় করবেন চার লাখ টাকা। তিন লাখ টাকা নিজ তহবিল থেকে খরচ করবেন। বাকি এক লাখ টাকা তাঁকে দান হিসেবে দেবেন বোন ও এলাকার এক ব্যক্তি।

পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এম আশরাফুল আলমের বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিপুল আয়ের পরও নির্বাচনী খরচ নিজে মেটাতে পারছেন না তিনি। মোট চার লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যে এক লাখ টাকা দেবেন তিনি নিজে। বাকি তিন লাখ টাকা নেবেন বাবা, শ্বশুর ও স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে।

কাউন্সিলর হওয়ার পর বার্ষিক আয় ও সম্পদ দুটিই বেড়েছে নগরের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের। এখন তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। নির্ভরশীলের আয়ও হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। নির্বাচনী ব্যয়ের পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়াপ্রবাসী বোনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ও আরেক প্রবাসীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নেবেন। বাকি তিন লাখ টাকা নিজের তহবিল থেকে খরচ করবেন।

নগরের পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী অনুপ বিশ্বাস বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় করার পরও নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন শ্বশুরের। তাঁর কাছ থেকে নেবেন ৫০ হাজার টাকা। বাকি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিজ তহবিল থেকে খরচ করবেন।

১০ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক আয় থাকার পরও ধার-দেনা ও দান নিয়ে নির্বাচন করবেন, এই রকম উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ, মোহরার মোহাম্মদ কাজী নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ আইয়ুব আলী চৌধুরী, ফিরিঙ্গিবাজারের বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ ও দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের গোলাম মো. চৌধুরী।

নিজ আয়েই নির্বাচন করবেন ১৮ কাউন্সিলর

সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরের মধ্যে এবার নির্বাচন করছেন ৩৮ জন। বাকি তিনজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। ৩৮ জনের মধ্যে পূর্ব বাকলিয়ার আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন অর রশীদ ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বাকি ৩৭ জনের মধ্যে নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন ১৮ জন। ১৬ জন করবেন ধার-দানে। বাকি তিনজনের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।

প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ও ধার-দান করে নির্বাচনী ব্যয় মেটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীরা নিজেদের আয় বৈধ করতে ধার-দেনা ও দানের বিষয়টি দেখাতে পারেন। তবে প্রার্থীরা সম্পদ বিবরণী ঠিকভাবে দিয়েছেন কি না, তা যাচাই করা উচিত। আবার যাঁদের কাছ থেকে ধার ও দান নিচ্ছেন, তাঁদের তা দেওয়ার সংগতি আছে কি না, তা–ও তদন্ত করা দরকার। কিন্তু প্রার্থীদের হলফনামাগুলো সেভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না।