১০ হাজার টাকার চুক্তিতে পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়াটে খুনি মাসুদ খুন করেন পুলিশ কনস্টেবল মো. শরীফ আহামেদকে। হত্যাকাণ্ডের আগে তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার টাকা। গতকাল রোববার কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানায় র‍্যাব।

মো. শরীফ আহামেদ খুন হন ৩ মার্চ দিবাগত রাতে। গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ৪ নম্বর গেটের সামনে থেকে তাঁর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বেওয়ারিশ হিসেবে শরীফের লাশটি দাফন করা হয় গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা কবরস্থানে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাঁর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করে। জানা যায়, শরীফ আহামেদ পুলিশ কনস্টেবল মো. আলাউদ্দিন হোসেনের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ দিন পর র‍্যাব মো. মোফাজ্জল হোসেন (২৮), মো. মাসুদ মিয়া (২৫) ও মো. মনির হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। তাঁরা প্রাথমিকভাবে দায় স্বীকার করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১–এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, শরীফ গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে মোফাজ্জল ও গাজীপুরের তাকওয়া বাসের চালক মনিরের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। কিছুদিন আগে এই দুজনের সঙ্গে শরীফের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ওই দ্বন্দ্বের জেরেই তাঁরা দুজন শরীফকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোফাজ্জল ময়মনসিংহে যান। তাঁর গ্রামের বাড়ির দূরসম্পর্কের আত্মীয় ও ভাড়াটে খুনি মাসুদের সঙ্গে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। চুক্তির অংশ হিসেবে মাসুদ আগেই পাঁচ হাজার টাকা নেন। পরে দুজনে গাজীপুরে মনিরের বাসায় বসেন। ৩ মার্চ তাকওয়া বাসের চালক মনির একটা চাকু কেনেন ৯৯ টাকা দিয়ে।

ওই দিনই (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোফাজ্জল কৌশলে কনস্টেবল শরীফকে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় নিয়ে আসেন। তারপর তাকওয়া পরিবহনের বাসে ওঠান। পরে গাড়িচালক মনির বাসটি চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে শ্রীপুরের দিকে এগোতে থাকেন। জয়দেবপুরের ভবানীপুর বাজার থেকে ইউটার্ন নিয়ে আবারও চান্দনা চৌরাস্তার দিকে যেতে থাকেন। তাঁরা বাসের দরজা–জানালা বন্ধ করে দেন। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মাসুদ হুইল রেঞ্জ দিয়ে শরীফের মাথায় আঘাত করেন। শরীফের মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে মাসুদ ও মোফাজ্জল দুজনে মিলে নাইলনের রশি দিয়ে শরীফের দুই হাত বেঁধে গাড়ির পেছনের দিকে নিয়ে যান। এরপর মোফাজ্জল শরীফের বুকের ওপর বসে এবং মাসুদের সঙ্গে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে শরীফকে হত্যা করেন।

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শরীফের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, টাকাপয়সা তিনজনে ভাগ করে নেন। রাত দুইটার দিকে বাস চালিয়ে তাঁরা জাতীয় উদ্যানে যান এবং লাশটি ফেলে আসেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা চাকুটি রাস্তার পাশে ঝোপে ফেলে দেন।

হত্যার পরও স্বাভাবিক ছিলেন খুনিরা

শাফী বুলবুল বলেন, হত্যাকারীরা তাঁদের কাপড়চোপড় পলিথিন ব্যাগে ভরে টুলবক্সের ভেতরে রাখেন। গাড়িতে রক্তের দাগ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেন। তারপর মনির তাঁর বাসা থেকে পরিষ্কার কাপড়চোপড় এনে তাঁর সহযোগীদের দেন। গোসল ও খাওয়াদাওয়া সেরে ভোর ছয়টার দিকে বাস সার্ভিসিংয়ের জন্য কোনাবাড়ীতে যান। রক্তমাখা জামাকাপড় কড্ডা ব্রিজের নিচে ফেলে দেন। পরে মাসুদ তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দায় চলে যান। মোফাজ্জল ও মনির স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যান। মাসুদ একজন থ্রি হুইল ড্রাইভার। শম্ভুগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়কে তিনি মাহেন্দ্র গাড়ি চালান।