মামাতো ভাইকে হত্যা করে মুক্তিপণও নিয়েছিল বনি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হাজারীবাগের মাদ্রাসা ছাত্র মো. ইব্রাহীমকে (১১) অপহরণের পর মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়েছিল খুনি। এর দুদিন পর গত ৭ মার্চ গাজীপুরের মীরেরগাঁও সংলগ্ন রেললাইনের পাশে ইব্রাহীমের লাশ পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে পুলিশ ও র‍্যাব জানতে পারে ইব্রাহীমের ফুপাতো ভাই বনি আমিন ওরফে ইয়ামিন (২২) ইব্রাহীমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আবদুল্লাহিল কাফী আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, বনি আমিন ইব্রাহীমের বাবা মনির হোসেনের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তখন তার সঙ্গে ইব্রাহীমের মা দুর্ব্যবহার করতেন। তাই প্রতিশোধ নিতেই ইব্রাহীমকে গলা টিপে হত্যা করে বনি আমিন। বনি ১১ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ইব্রাহীম মা-বাবার সঙ্গে হাজারীবাগের কালুনগরে থাকত। সে নবীনগরের একটি মাদ্রাসায় পড়ত। গত ৫ মার্চ মাদ্রাসা ছুটির পর ইব্রাহীম বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেও বাসায় যায়নি। এরপর স্বজনেরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খুঁজে তার সন্ধান পায়নি। পরদিন এ ঘটনায় ইব্রাহীমের বাবা হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরই দুটি মুঠোফোন নম্বরে ইব্রাহীমের বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে মনির হাজারীবাগ র‍্যাবের ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে মনির মুঠোফোনের একটি নম্বরে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন। এরপর মনিরের বাবা মুক্তিপণ চাওয়া নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করলে নম্বরগুলো বন্ধ পান।

বাবা মনির হোসেন জানান, ৭ মার্চ এক নারী তাকে ফোন করে বলেন, রেললাইনের পাশে একটি শিশুর লাশ পড়ে আছে। তার গলায় পরিচয়পত্রে থাকা নম্বর নিয়ে তাকে (মনির) ফোন করেছেন তিনি। পরে গাজীপুরে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় ইব্রাহীমের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ইব্রাহীমদের বাসা থেকেই বনি আমিনকে পুলিশ ও র‍্যাব আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে বনি আমিন জানান, দেড় বছর আগে তিনি তার মামার দোকানে চাকরি করতেন। কিন্তু মামি তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে গিয়ে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। পরে আবার মামার দোকানে কাজে যোগ দেন। ইব্রাহীমের মায়ের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে তিনি ইব্রাহীমকে খুন করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ মাদ্রাসা ছুটি শেষে ইব্রাহীম বের হলে তিনি ইব্রাহীমকে বলেন, তার (ইব্রাহীমের) মা-বাবা অসুস্থ। এই বলে গাজীপুরের বাসে ওঠায়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে গাজীপুরে পৌঁছার পর সেখান থেকে নেমে ইব্রাহীমকে নিয়ে মীরেরগাঁও সংলগ্ন রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন। একপর্যায়ে নির্জন স্থানে তিনি ইব্রাহীমকে গলাটিপে হত্যা করেন। পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন। মামার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণও আদায় করেন তিনি। মামা-মামি যাতে সন্দেহ করতে না পারে সে জন্য তিনি ইব্রাহীমের জানাজায় অংশ নেন বলে জবানবন্দিতে বলেন বনি আমিন।