৩ মাসে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কমেছে ২৩৭

প্রতীকী ছবি। রয়টার্স।
প্রতীকী ছবি। রয়টার্স।

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে যেমন প্রাণহানি ঘটছে, ঠিক তেমনি যোগাযোগব্যবস্থাও অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বড় প্রভাব পড়েছে আকাশপথে। বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বড় ধরনের আঘাত এসে পড়েছে।

দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ২৮টি বিমান সংস্থা প্রতি সপ্তাহে ৬০৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। সেই সংখ্যা এখন ৩৬৯–এ নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে গত আড়াই মাসে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটের ২৩৭টি ফ্লাইট কমে গেছে।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মোট ২৮টি বিমান সংস্থা যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এর মধ্যে দেশীয় বিমান সংস্থা রয়েছে চারটি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে এই ২৮টি বিমান সংস্থার প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬০৬টি ফ্লাইট ছেড়ে যেত। কিন্তু তিন মাসের ব্যবধানে এই সংখ্যা বর্তমানে ৩৬৯–এ নেমে এসেছে। অর্থাৎ, ২৮টি বিমান সংস্থা গত জানুয়ারি মাস থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আড়াই মাসে ফ্লাইটের সংখ্যা ২৩৭টি কমিয়ে দিয়েছে। সেই হিসাবে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ ফ্লাইট কমে গেছে।

দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে এই ফ্লাইট কমে যাওয়ায় তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের চারটি বিমান সংস্থা—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।

চারটি বিমান সংস্থা প্রতি সপ্তাহে সর্বমোট ৩০১টি ফ্লাইট বাংলাদেশ থেকে পরিচালনা করত। এগুলোর মধ্যে বিমানের প্রতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল ২১৮টি। করোনাভাইরাসের কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিমান বর্তমানে ৮৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তাদের ১৭টি আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৮টি রুট চালু রয়েছে। বিমানের সাপ্তাহিক ১৩৪টি ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে।

দেশের তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থার মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস মধ্যপ্রাচ্য এবং প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে ৪৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এটি বর্তমানে ২৮টিতে নেমে এসেছে। ইউএস-বাংলার সাপ্তাহিক ফ্লাইট কমে গিয়েছে ২১টি।

>

চারটি দেশীয় বিমান সংস্থার প্রতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল ৩০১টি, বর্তমানে চলছে ১৭৬টি
২৪ বিদেশি বিমান সংস্থার মধ্যে ১৫টির সাপ্তাহিক ফ্লাইট কমেছে
২৪টি বিদেশি বিমান সংস্থার প্রতি সপ্তাহে মোট ফ্লাইট ছিল ৩০৫টি, ১১২টি ফ্লাইট কমে এই সংখ্যা বর্তমানে ১৯৩

আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বাংলাদেশ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এর মধ্যে ভারতের কলকাতায় তাদের সাপ্তাহিক ফ্লাইট ছিল ১৪টি। ভারত ভ্রমণ ভিসা বাতিল ও স্থগিত করায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বর্তমানে ওমানের মাস্কাট, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এবং সিঙ্গাপুর রুটে প্রতি সপ্তাহে ১৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্যদিকে নভোএয়ার শুধু কলকাতায় প্রতি সপ্তাহে সাতটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাত। তাদের এসব ফ্লাইট এখন বন্ধ রয়েছে।

বিদেশি ২৪টি বিমান সংস্থার মধ্যে এয়ার অ্যারাবিয়ার প্রতি সপ্তাহে ফ্লাইট ছিল ২৮টি, এখন চলছে ১৪টি। এভাবে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ১০টি থেকে ৮টি হয়েছে। কুয়েত এয়ারওয়েজের ১২টি ফ্লাইট এখন বন্ধ। কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ২৮ থেকে ১৪, ভুটানের ড্রুক এয়ারলাইনসের ৩টি ফ্লাইট এখন বন্ধ রয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইনস বাংলাদেশ প্রতি সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন সেটি ২১–এ নেমে গেছে। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ঢাকায় তাদের সাপ্তাহিক ২৮টি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ১৪ থেকে কমে এখন ৫টি। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন ঢাকা থেকে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট চালাত। করোনাভাইরাসের কারণে যাত্রী হারিয়ে বিমান সংস্থাটি গত ১৫ দিনে ১১টি ফ্লাইট চালিয়েছে। চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস সাতটির বদলে ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালাচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৪টি বিদেশি বিমান সংস্থার প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যেত ৩০৫টি ফ্লাইট। সেই সংখ্যা কমে বর্তমানে ১৯৩–এ এসে দাঁড়িয়েছে।

যাত্রী আসা কমেছে
বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে ফ্লাইটসংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীও কম আসছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। সতর্কতা জারির আগে ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে গড়ে ১০ হাজার যাত্রী দেশে প্রবেশ করতেন। বিশেষ সতর্কতা জারির পর বিদেশফেরত সব যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। ১৩ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ১৪ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪ হাজার ৬১২ জন বিদেশফেরত যাত্রীকে স্ক্যান করানো হয়। এই সংখ্যা ১৫ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ১৬ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত কমে হয়েছে ২ হাজার ৩২৪ জন।

এভিয়েশন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে চলাচল আরও কমে যেতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের অন্য কোনো দেশ থেকে যাত্রীদের বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো বাংলাদেশে আনতে পারবে না। যদি তারা যাত্রী নিয়ে আসে, তাহলে এয়ারলাইনগুলোকে নিজ খরচে সেই যাত্রীদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ–সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা এবং ওই সব দেশের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় প্রতিদিন এভিয়েশন খাতে ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় কম হচ্ছে বলে জানান বেবিচক চেয়ারম্যান।

বিদেশি ও দেশের বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো লাভ-ক্ষতির হিসাব দেয় না। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডি ও সিইও মোকাব্বির হোসেন জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিমানে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে ২৭০ কোটি টাকা।