শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে অভিভাবকদের স্বস্তি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র। মতিঝিল, ঢাকা, ১৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র। মতিঝিল, ঢাকা, ১৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের এক সপ্তাহ পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় অভিভাবকেরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁরা বলছেন, এটা আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

গৃহিণী জেবা মাহবুবা দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরই নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ খবরে স্বস্তি পাচ্ছি। তবে আরও আগে করা উচিত ছিল। বাচ্চারা তো ছোট, ওদের বোঝানো হয় সতর্ক থাকার জন্য কিন্তু স্কুলে যাওয়া–আসা পর্যন্ত কত মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, কোত্থেকে কী হয়, বেশ আতঙ্কিত ছিলাম।’

সরকারি কর্মকর্তা ফুয়াদ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারদিকে যে অবস্থা, তাতে চিন্তিত ছিলাম। গত সপ্তাহ থেকেই আমি আমার দুই ছেলেকে স্কুলে দেওয়া বন্ধ করেছিলাম। আমাদের এখানে তো মানুষ ওতটা স্বাস্থ্যসচেতন না। কোত্থেকে কীভাবে ছড়ায় চিন্তা হচ্ছিল। স্কুল বন্ধের ঘোষণায় দেখলাম আমার অন্য সহকর্মীরাও বেশ খুশি হয়েছে।’

স্কুলের নোটিশ বোর্ডে লাগানো হয়েছে ছুটির ঘোষণা। মোহাম্মদপুর, ঢাকা,  ১৬ মার্চ।  ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
স্কুলের নোটিশ বোর্ডে লাগানো হয়েছে ছুটির ঘোষণা। মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ১৬ মার্চ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

যেসব অভিভাবক স্কুলে সন্তানদের পাঠাচ্ছিলেন, তাঁরাও বেশ চিন্তিত ছিলেন। আজ সকালে ধানমন্ডির স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাঙ্গণে অভিভাবকেরা করোনাভাইরাসের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। সেখানও সবাই কথা স্কুল বন্ধ করার কথা বলছিলেন। অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছিলেনও স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। স্কুলের পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে সকালে জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন।

আদিবা হাসানের দুই ছেলে পড়ে রাজধানীর মিরপুরের দুটি স্কুলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তে বেশ স্বস্তি বোধ করছেন। এই গৃহিণী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইরাস ছড়ানোর খবর যেভাবে পাচ্ছি, তাতে বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম এই সিদ্ধান্তের।’

স্কুলে মেয়েকে পাঠানো নিয়ে দোটানায় ছিলেন ব্যাংকার সুমাইয়া ফয়েজ। গত বুধবার থেকে তিনি মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাননি। আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। বেশ চিন্তায় ছিলাম কী করব না করব।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। টিএন্ডটি উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র। মতিঝিল, ঢাকা, ১৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সতর্কতা হিসেবে মাস্ক পরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। টিএন্ডটি উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র। মতিঝিল, ঢাকা, ১৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেদিনের পর থেকেই অভিভাবকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অনেকে নিজে থেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে আসছিল। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এ সময় কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে। ছুটির এই সময় শিক্ষার্থীদের বাসায় থাকতে হবে।