ঘুষের টাকা না দিতে পারায়...

হতদরিদ্রের নামে বরাদ্দ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে  স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার দক্ষিণ সুনই গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
হতদরিদ্রের নামে বরাদ্দ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার দক্ষিণ সুনই গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বিধবা জাহেরা খাতুনের স্বামী সিরাজ আলী মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। তাঁর থাকার একচিলতে জায়গা ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। পাঁচ সন্তানের মধ্যে চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাকে দেখভাল করছেন। তাঁরও পাঁচ সন্তান। মা, স্ত্রীসহ আট সদস্যের পরিবারটির থাকার জন্য মাত্র একটি ছোট জীর্ণ টিনের ঘর। এবার সরকারিভাবে একটি পাকা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন জাহেরা খাতুন। কিন্তু ‘ঘুষের টাকা’ না দিতে পারায় ঘরটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বাড়িতে নির্মাণ করা হচ্ছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের দক্ষিণ সুনই গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে জাহেরার ছেলে মতিউর রহমান জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করা হয়।

 লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অংশ হিসেবে গৃহহীন পরিবারের জন্য দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কলমাকান্দায় ৩৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। আধা পাকা প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে পোগলা ইউপির দক্ষিণ সুনই গ্রামের জাহেরা আক্তার, ফাতেমা আক্তার ও বৈছাজুরি গ্রামের কাঞ্চন বালা বিশ্বাসের নামে তিনটি ঘর রয়েছে। ইউএনওর তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) ঘরগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু এক মাস আগে দক্ষিণ সুনই গ্রামের জাহেরার নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরটির নির্মাণ খরচ বাবদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মোফাজ্জল হোসেন হায়দার ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। জাহেরা সে টাকা দিতে না পারায় তাঁর নামের ওই ঘরটি সম্প্রতি ইউপি সদস্য মোফাজ্জল তাঁর নিজ বাড়িতে নির্মাণ শুরু করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় জাহেরা ও তাঁর ছেলে মতিউরকে নানা হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন মোফাজ্জল।