ঘুষ নিয়ে ফেঁসে গেছেন তিনি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাজশাহী জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতার চারটি দলিল সম্পাদনের সময় বেকায়দায় ফেলে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাবরেজিস্ট্রার জামিনুল হক। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিনই তিনি অসুস্থতার দরখাস্ত দিয়ে চলে যান।

যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই আওয়ামী লীগ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সাবরেজিস্ট্রার বেলা তিনটার পরে আর কোনো দলিল করেন না, এটা তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু ব্যাংকের কাজ করতে গিয়ে তাঁর তিনটা বেজে যায়। তখন সাবরেজিস্ট্রার আর দলিলে সই করতে রাজি হননি। বিষয়টি দুদককে জানানো হয়। তখন দুদক কার্যালয় থেকে ফোন করা হলেও সাবরেজিস্ট্রার পাত্তা দেননি। একপর্যায়ে তাঁর দালালের মাধ্যমে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে গিয়ে দলিলে সই করতে রাজি হন। এ জন্য দালাল তাঁর কাছ থেকে ৪০ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেদিন দলিল না হলে তাঁর বহু টাকার ক্ষতি হবে। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাঁর এই দলিলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দলিল না হলে তাঁদের একজনের চাকরি চলে যাওয়ার অবস্থা। বাধ্য হয়ে তিনি সেভাবেই দলিল করতে রাজি হন, কিন্তু টাকা লেনদেন করেন অন্য জায়গায়। সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরায় ঘুষের টাকা লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে। যেহেতু সাবরেজিস্ট্রার দুদককে পাত্তা দেননি। এ জন্য দুদকও তাঁর দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমেছে। তারা প্রমাণপত্র জোগাড় করেছে।

৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল সাবরেজিস্ট্রার জামিনুলের কার্যালয়ে হানা দেয়। কিন্তু জামিনুল অফিসে ছিলেন না। সেদিন দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে জামিনুল অফিসে আসেননি। সেদিন অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে দরখাস্ত দিয়ে গেছেন তিনি।

দুদক সূত্র জানায়, জামিনুল প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন। বিমানে ঢাকায় যাতায়াত করেন। তিনি পর্যটন মোটেলেই কমিশনে দলিল সম্পাদন করতেন। আর পকেটে পুরতেন ঘুষের টাকা।

সারেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একাধিক সূত্র জানায়, জামিনুল এর আগে ঢাকার ধানমন্ডির সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন। তার আগে ছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। সেসব এলাকাতেও তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাঁকে বারবার বদলি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে সাবরেজিস্ট্রার জামিনুল অফিসে আসছেন না। এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ১১ মাস ছুটির পর তিনি (জামিনুল) রাজশাহীতে এসে যোগদান করেছিলেন। দুই সপ্তাহের ছুটির দরখাস্ত দিয়ে সাড়ে তিন মাস ধরেই তিনি অনুপস্থিত। প্রথমবার কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হলে তিনি জবাবে জানিয়েছিলেন, ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তিনি রাজশাহীতে ফিরতে পারছেন না। দ্বিতীয়বার নোটিশ দেওয়া হলে তিনি জবাব দেননি। ফোন বন্ধ করে রেখেছেন।

জেলা রেজিস্ট্রার জানান, জামিনুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আগামী সপ্তাহে আইজিআর (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন) বরাবর সুপারিশ করবেন।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পলাতক সাবরেজিস্ট্রার জামিনুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানের অনুমতির জন্য কাল বুধবার কমিশনে লিখবেন।