করোনা মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

মাহমুদুর রহমান।
মাহমুদুর রহমান।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এর কার‌ণ জনসংখ্যার ঘনত্ব, সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনতা ও দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো। তাই বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারকে আগাম ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাতে পরিস্থিতি সামলানো কিছুটা সহজ হবে এবং ঝুঁকি কমবে। তবে শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ও দরকার।

করোনা মোকাবিলায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে কী ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে, তা জানা জরুরি। এখন পর্যন্ত বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই সংক্রমণের খবর শোনা যাচ্ছে। সংক্রমণের ধরন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা খতিয়ে দেখতে এ সময়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের তথ্য-উপাত্তও বিশ্লেষণ করা দরকার। করোনায় আক্রান্তের হার বাড়লে হাসপাতালে নিউমোনিয়া–আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরিচালিত দেশের ১৯টি হাসপাতালে ২০০৭ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারির ব্যবস্থা আছে। এ হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের পরীক্ষা করা গেলে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে করোনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

বিশ্বে দুই ধরনের কোয়ারেন্টিন প্রচলিত। একটি হচ্ছে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে পরিস্থিতি অনুযায়ী বাসায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোনো ব্যক্তিকে রাখা। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো পদ্ধতিই ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনের পরিবেশ নিয়েও নানা অভিযোগ আছে। কোয়ারেন্টিনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার, যাতে মানুষ সেখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আবার ‘হোম কোয়ারেন্টিনের’ করণীয় বিষয়গুলোও মানুষকে আরও স্পষ্ট করে জানাতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে, এটি ভালো সিদ্ধান্ত। এখন অফিস-আদালতসহ অন্য প্রতিষ্ঠান কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। সিটি নির্বাচনসহ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। রোগী ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমন চিকিৎসক-নার্সদেরও রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ও দেখতে হবে।

করোনায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই বা দেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো সে রকম কিছু হয়নি—এ ধরনের বার্তা দেওয়া যাবে না। রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে না জানলে মানুষ সচেতন হবে না।