কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজে 'সংযুক্ত' শিক্ষকদের ভিড়

অর্থনীতি, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক আছেন ১২ জন। কলেজে ইতিহাস বিষয় নেই, তবু এ বিষয়ে তিন বছর ধরে শিক্ষক রয়েছেন একজন। কলেজে সহযোগী অধ্যাপকের কোনো পদ না থাকলেও পাঁচজন সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত। এই চিত্র কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজের।

সিটি কলেজে মোট কর্মরত ২৯ জন শিক্ষকের ২৪ জনই ঢাকায় যোগদানের পর ‘সংযুক্ত’ হিসেবে এখানে এসেছেন। এ কারণে সরকারকে এসব শিক্ষকের পেছনে বাড়িভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলার অন্য কলেজের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, উচ্চমাধ্যমিকের একটি বিষয়ে সর্বোচ্চ দুজন শিক্ষক হলেই চলে। একজন দিয়েও ক্লাস চালানো যায়। কিন্তু এখানে শিক্ষকে ঠাসা। আবার কোনো কোনো বিষয়ে উল্টো চিত্র, প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম।

কুমিল্লা নগরের মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় ১ দশমিক ৫ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, একসময় এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল কুমিল্লা গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট। তখন একজন অধ্যক্ষসহ কলেজে শিক্ষকের পদ ছিল আটটি। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপক তিনজন ও প্রভাষক চারজন। ওই পদ রেখেই ২০১৬ সালের ১২ মে কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ।

এ কলেজে কেবল উচ্চমাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ) পাঠদান চলে। বর্তমানে ৯৭৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কলেজে শিক্ষকের সংখ্যা ২৯। এর মধ্যে পাঁচজন স্থায়ী শিক্ষক। বাকি ২৪ জনই সংযুক্ত শিক্ষক। অর্থাৎ, তাঁদের যোগদান ঢাকায়। কিন্তু কাজ করছেন এই কলেজে। এতে ওই শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দিতে হচ্ছে সরকারকে। তার ওপর একই বিষয়ে চারজন পর্যন্ত শিক্ষক রয়েছেন। এতে বেশির ভাগ শিক্ষকের কোনো ক্লাস থাকে না। কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ৫০১ জন ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শিক্ষকদের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অর্থনীতি বিষয়ে দুজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। ইংরেজি বিষয়ে তিনজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে তিনজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক রয়েছেন। প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। পুরো কলেজে সহযোগী অধ্যাপকের কোনো পদ নেই। অথচ পাঁচজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। বাংলা বিষয়ে একাধিক শিক্ষক প্রয়োজন, কিন্তু আছেন একজন সহযোগী অধ্যাপক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন কলেজের অন্তত ছয়জন শিক্ষক বলেন, এখানে তদবির করে অনেকে আসেন। বিনিময়ে তাঁরা বাড়িভাড়া বেশি পেয়ে থাকেন। তাঁরা ঢাকা শহরের মতো মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হিসাবে বাড়িভাড়ার টাকা পান। অথচ কুমিল্লায় কর্মরত শিক্ষকেরা ৪০ শতাংশ করে বাড়িভাড়া পান। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ কুমিল্লা শহরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজগুলোয় শিক্ষকের অভাবে ক্লাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে এই কলেজের শিক্ষকদের কুমিল্লা শহরের অন্যান্য কলেজে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। সেখানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ওই দুই কলেজের চেয়েও কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজে ইংরেজিতে বেশি শিক্ষক রয়েছেন।

কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, নতুন করে এখানে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখানে সংযুক্ত শিক্ষক হিসেবে অনেকে কাজ করেন। তিনি বলেন, বাংলার শিক্ষক দরকার। বর্তমানে বাংলা ও কৃষিবিজ্ঞানে একজন করে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। কিন্তু বিষয় আছে। পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে ওই বিষয়ের পাঠদান চালাতে হয়।

কলেজের সমস্যা তুলে ধরে অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, কলেজে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। পুরো কলেজে ভবন মাত্র দুটি। এর মধ্যে একটি তিনতলা ও একটি একতলা। কলেজে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা ছয়। অবকাঠামোগত সমস্যাই এখানে প্রধান সমস্যা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক সোমেশ কর চৌধুরী বলেন, মাউশির অধিদপ্তর ঢাকা থেকে শিক্ষকদের সংযুক্ত করে সিটি কলেজে পদায়ন করা হয়েছে। সংযুক্ত করার এমন বিধান আছে। এখানে তাঁদের তেমন কিছু করার থাকে না।