তাঁরা ঢাকায় ফিরবেন কীভাবে?

যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার পরও গতকাল সোমবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সুইডেন থেকে বাংলাদেশের যাত্রীদের ফ্লাইটে নিয়েছে; যদিও ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের দোহায় এনে বসিয়ে রেখেছে কাতার এয়ারওয়েজ।

কাতারের দোহা বিমানবন্দরে আটকে পড়া তিন বাংলাদেশি হলেন মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া (৫৯), তাঁর স্ত্রী রাফিজা আফরোজ (৪৮) ও আরেক নারী রায়হানা বেগম (৬৩)।

মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘সুইডেনে থাকা মেয়েকে দেখার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান তিনি। তাঁদের ফেরার টিকিট কাটা হয় কাতার এয়ারওয়েজে। তারিখ ১৬ মার্চ। গত শনিবার বাংলাদেশ সরকার ইউরোপের সব দেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী আসায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—এমন তথ্য জানার পর আমি এয়ারওয়েজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কাতার এয়ারওয়েজ আমাদের জানায়, তারা আমাদের ঢাকায় পৌঁছে দিতে পারবে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আমরা স্টকহোম বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর ১৭০ ফ্লাইটে উঠি। স্টকহোম এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের স্টকহোম-কাতার এবং কাতার-ঢাকা দুটি বোর্ডিং পাসই দেওয়া হয়। কাতার থেকে ঢাকায় আসার জন্য দোহা বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬টা ৫ মিনিটে আমাদের কিউআর ৬৩৮ ফ্লাইটে আসার কথা ছিল। এই বোর্ডিং পাস পেয়ে আমরা নিশ্চিত হই আমরা ঢাকায় পৌঁছাব। পরে কাতার সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে কাতারের দোহা বিমানবন্দরে কিউআর ১৭০ ফ্লাইটটি পৌঁছায়। ফ্লাইটটিতে আমরা তিন বাংলাদেশিসহ ১১ থেকে ১২ জন যাত্রী ছিলেন। দোহায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানানো হয়, আপনাদের ঢাকায় নেওয়া হবে না। সুইডেনে ফেরত যেতে হবে। আমাদের জানায়, আমাদের তো সুইডেনের ট্রাভেল ভিসা শেষ। এ কথা জানার পর তারা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। ২০ ঘণ্টা পার হলেও এখনো আমাদের পাসপোর্ট ফেরত দেয়নি তারা।’

জানা যায়, কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর ৬৩৮ ফ্লাইটটি কাল ওই তিন বাংলাদেশিকে ছাড়াই ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে রাত ১টা ৫৫ মিনিটে।

স্থানীয় সময় আজ সকাল নয়টায় মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বিকেল চারটা থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের বিমানবন্দরের ট্রানজিট ডেস্কের সামনে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পানি আর সামান্য খাবার ছাড়া কিছুই সরবরাহ করেনি এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ। থাকার কোনো জায়গা দেয়নি। মানবেতর অবস্থায় রয়েছি আমরা।’

মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের কী করবেন, জানতে চাইলে কাতার এয়ারওয়েজ ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার অফার করে। আমাদের বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ায় আপনাদের পাঠিয়ে দিতে পারি। জাকার্তা বিমানবন্দরে নামিয়ে দেব। সেখান থেকে আমরা কী করব, এর কোনো উত্তরই তারা দেয়নি। দায় এড়াতেই এটা করতে চাইছে তারা।’

রাফিজা আফরোজ জানান, তিনি মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। ১৯ ঘণ্টা ধরে চেয়ারে বসে থেকে তিনি খুবই অসুস্থ এখন। কিছুই বুঝতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত এক মিনিটও ঘুমাতে পারেননি তিনজন।

কাতারের দোহা বিমানবন্দরের ট্রানজিট ডেস্কের সামনে ২০ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন তিন বাংলাদেশি। ছবি: প্রথম আলো
কাতারের দোহা বিমানবন্দরের ট্রানজিট ডেস্কের সামনে ২০ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন তিন বাংলাদেশি। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় বাংলাদেশ সরকার গত শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে আকাশপথে যাত্রী আসায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়ে ছিলেন, রোববার রাত ১২টার পর থেকে ১৪ দিনের জন্য যুক্তরাজ্য বাদে ইউরোপের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। পরে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ইউরোপ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য বাংলাদেশের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই নির্দেশনা লিখিতভাবে সব এয়ারলাইনসকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। রোববার সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, কোনো বিমান সংস্থা ইউরোপ থেকে যাত্রী বহন করতে পারবে না। এরপরও ইউরোপ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় ৯৬ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। কিউআর ৬৩৪ নম্বরের ওই ফ্লাইট ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফ্লাইটটির অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু এটি সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে অবতরণ করার কথা। যাত্রীদের মধ্যে ৬৮ জন ইতালি থেকে এবং ১৮ জন জার্মানি থেকে আসছেন। এ ছাড়াও কাতারে ইউরোপ থেকে তিন বাংলাদেশিকে নিয়ে বিকেল চারটায় নামে কিউআর ১৭০ ফ্লাইটটি। পরে কিউআর ৬৩৮ ফ্লাইটে ঢাকা আসার কথা ছিল ওই বাংলাদেশিদের। তবে এখন দোহা বিমানবন্দরে আটকা আছেন ওই তিনজন। ওই তিনজনের অভিযোগ, তাঁদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না কাতার এয়ারওয়েজ।

সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত। কাতার এয়ারওয়েজ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাদের এনেছে। এখন এই বাংলাদেশিদের কীভাবে দেশে আনা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। শিগগিরই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে কাল বুধবারের (১৮ মার্চ) পর আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করবে না কাতার এয়ারওয়েজ।