শিক্ষার্থীদের জন্য বুয়েটেই হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়—বারবার ভালো করে হাত ধোয়া। কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয় ছড়িয়ে পড়ার পর বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট দেখা দেয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, উৎপাদনকারীরাই সরবরাহ করতে পারছে না। তবে এই সংকটে বসে নেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের চাহিদা মেটাতে তৈরি করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

তাঁদের নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণও করছেন। আজ মঙ্গলবার বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহ করছেন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলে স্টিকার লাগানো হচ্ছে। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলে স্টিকার লাগানো হচ্ছে। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

আজ কথা হলো বুয়েটের রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শাখাওয়াৎ এইচ ফিরোজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখতে পাই। তখন মনে হলো, কিছু একটা করা যায় কি না। তখন আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার সহকর্মীরা—প্রধানত তরুণ সহকর্মীরা এগিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে আছেন আয়েশা শারমীন, শারমীন নিশাত, আবু বিন ইমরান, চঞ্চল কুমার রায়, ইলিয়াস হোসেন, আইয়ুব আলী, মাহবুব আলম প্রমুখ।’

অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা বসে ওই দিনই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের একটি ফরমুলেশন তৈরি করি। আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করে সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ফোরাম ৮৬। গতকাল রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে ফেলি এবং গতকাল থেকে বিনা মূল্যে বিতরণ শুরু করি।’

হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাঠানো হবে বিভিন্ন বিভাগে। খামে বোতল ভরা হচ্ছে। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাঠানো হবে বিভিন্ন বিভাগে। খামে বোতল ভরা হচ্ছে। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বললেন, ‘রসায়ন বিভাগ আমাদের জন্য বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, তাই তাদের ধন্যবাদ জানাই। মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের দেশে ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় এ উদ্যোগটি জরুরি ছিল। বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মার্কেট আউট।’

রসায়ন বিভাগের গবেষণাগারে চলছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া। এখানে দুটি বোতলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। একটি ৬০ এমএল এবং অন্যটি ১০০ এমএল। বোতলে স্টিকার লাগাতে ব্যস্ত শিক্ষার্থী মেহরুন নিগার। তিনি বলেন, ‘একটি সংকট চলছে, এই সময় আমাদেরও কিছু করা দরকার। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। স্যারদের সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর সুযোগ পেলাম। কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে দেশের জন্য কিছু একটা করছি।’ আরেক শিক্ষার্থী আবির পোদ্দার বলেন, ‘ফিরোজ স্যারের সঙ্গে কাজ করতে এসে একই সঙ্গে জনহিতকর কাজও করা হচ্ছে, নিজেরও অভিজ্ঞতা বাড়ছে।’

হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহ করতে এসেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহ করতে এসেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

অধ্যাপক শাখাওয়াৎ বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যদি আমাদের দিয়ে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করাতে চান, তাহলে আমরা ফরমুলেশন করে দিতে পারব। যেহেতু প্রচুর পরিমাণে তৈরি করা সম্ভব না, তাই তাঁদেরই দেব, যাঁরা বিনা মূল্যে তা বিতরণ করবেন।’

বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে কাজ করছেন তাঁরা। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
বিনা মূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে কাজ করছেন তাঁরা। বুয়েট, ঢাকা, ১৭ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম