যারা জনগণের টাকা মেরে খায়, তারাই ভিক্ষুক: মাশরাফি

নড়াইলের লোহাগড়ায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য উপকরণ দেওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: মারুফ সামদানী
নড়াইলের লোহাগড়ায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য উপকরণ দেওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: মারুফ সামদানী

‘যারা চেয়ারে বসে ক্ষমতার জোরে জনগণের টাকা মেরে খায়, তারাই ভিক্ষুক। যারা দরিদ্র মানুষের বরাদ্দে হাত দেয়, তারাই ভিক্ষুক।’

কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি আজ মঙ্গলবার বিকেলে নড়াইলের লোহাগড়ায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য উপকরণ দেওয়ার সময়ে এসব কথা বলেন।
মাশরাফি বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য খেজুর আসে, দুম্বা আসে, তা ভিক্ষুকেরা জানে না, দরিদ্র মানুষ জানে না। চেয়ারে যারা আছে, তারা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেয়। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতার তালিকা প্রশাসনকে ঠিকমতো করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার যেটা হোক, তাকে সেটা দিতে হবে। যার যা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হবে।

নড়াইল-২ (লোহাগড়া-নড়াইলের একাংশ) আসনের সাংসদ মাশরাফি আজ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের মধ্যে ছাগল ও ওজন মাপার যন্ত্রসহ নানা উপকরণ বিতরণ করেন।
এ সময় মাশরাফি বিন মুর্তজা ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার পেছনে ঘুরে বেড়ানোর দরকার নেই। যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে কাজ করেন। কাজের মাঝ দিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক হবে। আমার পেছনে ঘুরে যদি কোনো অপকর্ম করেন, তখন কিন্তু আমি ছাড়ব না। তখন আমার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে।’

প্রশাসন ও রাজনীতিকদের উদ্দেশে মাশরাফি বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী ও দুষ্ট লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। লোহাগড়ায় একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হলো। তাঁর পরিবার শেষ হলো। যারা হত্যা করেছে, তারাও শেষ হবে। দলের নেতা-কর্মী সবাইকে আমি সম্মান করি। চেয়ারই কি মুখ্য বিষয়? চেয়ারের জন্য একজনকে খুন করতে হবে? তুচ্ছ ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ এগুলো বন্ধ করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে সামনে নিয়ে আসেন। হামলা, সংঘর্ষ, খুন—এগুলো চলতে দেওয়া যায় না। মাদক, ধর্ষণ চলবে না। এর প্রতিরোধে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনীতিকদের এগিয়ে আসতে হবে।’

মাশরাফি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে নড়াইলে এখানো করোনা আক্রান্ত হয়নি। এর প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য ১০০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতালে ১০ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা ভিক্ষুকদের মধ্যে উপকরণ বিতরণ শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কেক কাটেন। এরপর তিনি লোহাগড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে যান। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেখানে ছাত্রলীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কেক কাটেন। ৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক ভবন হচ্ছে কলেজে। দুই বছরের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর লোহাগড়া-ইতনা-রাধানগর সড়ক উদ্বোধন করেন মাশরাফি। পরে সম্প্রতি নিহত সাবেক চেয়ারম্যান বদর খন্দকারের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন।

এসব কর্মসূচিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান, লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম এ হান্নান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র, লোহাগড়া থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিয়ূর রহমান, পৌর মেয়র আশরাফুল আলমসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের নেতা-কর্মীরা।