ইভিএমের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে ভোটাররা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) আতঙ্ক মনে করছেন ভোটারদের অনেকে। করোনাভাইরাস যখন বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এই ইভিএম সংক্রমিত ভোটারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।

করোনাভাইরাস–সংক্রমিত দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশে ফিরেছেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস আলোচনায় আসার পর ৭১৯ জন প্রবাসী এরই মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। তাঁদের প্রত্যেককে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আমরাও তাঁদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখছি। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন “হোম কোয়ারেন্টিনে” রয়েছেন।’

চট্টগ্রাম সিটিতে ইভিএম বা আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সচেতন ভোটারদের মধ্যে। তাই ফেসবুকে নির্বাচন স্থগিত রাখার জোরালো দাবি উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সার্বক্ষণিকভাবে সিটি মেয়র পদপ্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। কয়েক দিন ধরে তাঁর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণে তিনি কিছুটা বিচলিত।

মফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা–সংক্রমিত কোনো নাগরিক আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দিলে অন্য ভোটাররাও ইভিএমের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারেন বলে চিকিৎসকেরা আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস–আক্রান্ত রোগী আছে কি না, জানা নেই। তবে চট্টগ্রাম ঝুঁকিতে আছে, যা সিভিল সার্জন ঘোষণা করেছেন। তাই জনস্বার্থে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।’ 

আতঙ্কের কথা গোপন রাখেননি নগরের আগ্রাবাদের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোটা বিশ্ব করোনা-আতঙ্কে কাবু হয়ে গেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পৌরসভা ভোট স্থগিত হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের বাহাদুরি দেখানোর কী আছে?’

চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী। গত সোমবার হাম–রুবেলাসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন এই সাবধানতার কথা বলেন। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে সভা-সমাবেশ কিংবা গণজমায়েত না করার অনুরোধ করেন তিনি।

সিভিল সার্জন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেবল ইভিএম সমস্যা নয়, ভাইরাস সংক্রমিত কোনো ভোটার কেন্দ্রে গেলেই বড় সমস্যা তৈরি হবে। আমরা বারবার জমায়েত না করার সতর্কবার্তা দিচ্ছি। আর ইভিএমে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নইলে ঝুঁকি তো থাকবেই।’

সিভিল সার্জনের এই সাবধানবার্তার মধ্যেও চট্টগ্রামে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা থেমে নেই। তবে প্রচারণা ও জমায়েতের মধ্যে লোকসমাগম অনেক কমে গেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত আসা
পর্যন্ত আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রচারণা বন্ধ থাকছে না। নির্বাচন হবে।’ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে করোনাভাইরাস যদি ছড়িয়ে পড়ে, দায় কার—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কিছু হোক, তা আমরা চাই না। তবে নির্বাচন কমিশন সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছে। সবার মতামত নিয়ে নিশ্চয়ই একটি সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২৯ মার্চ ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬ বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রতি বুথে একটি করে ইভিএম স্থাপন করা হবে। একটি ইভিএম দিয়ে গড়ে ৪০০ জন ভোট দিতে পারবেন। চট্টগ্রামে এবার ভোটারসংখ্যা ১৯ লাখ ৫১ হাজার।