হাওরে হাঁসের ঝাঁক
টাঙ্গুয়ার হাওরে বা এর আশপাশের হাওরে যাঁরা গেছেন, তাঁদের চেখে পড়বে বিরাট বিরাট হাঁসের ঝাঁক। রাখাল যেমন গরুর পাল নিয়ে ছুটে চলে, তেমনি হাঁসের ঝাঁক নিয়ে ছুটে চলেন এর মালিক। হাওরে মানুষ এসব হাঁস পোষেন এবং এই হাঁসের ডিম, বাচ্চা ও বড় হাঁস বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
একেক পালে হাজারো হাঁস থাকে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয় নৌকা দিয়ে। দল বেঁধে এসব হাঁস হাওরের মাছ বা জলজ প্রাণী কিংবা শেওলা খেয়ে থাকে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ‘হাওরের হাঁসের ত্যাল (তেল) হয় জব্বর।’ এই হাঁসের স্বাদ অন্য হাঁস থেকে আলাদা বলেই এর বেশ কদর আছে। এই হাঁস যাতে অন্য হাঁসের দলে মিশে যেতে না পারে, এ জন্য এর মালিকেরা তাঁদের পালের হাঁসে নির্দিষ্ট রং দিয়ে থাকেন। দূর থেকে তাই একেকটি হাঁসের ঝাঁকের রং একেক রকম দেখা যায়। মনে হয় রঙিন কোনো পাখির ঝাঁক।
লাভজনক হওয়ায় হাওরপারে এখন অনেকেই হাঁসের খামার করছেন। বর্ষায় হাওরের পানিতে নেমে ঝাঁক বেঁধে খাবার খায় হাঁস। শুকনো মৌসুমে খাল-বিল-নদীর অল্প পানিতে খাবারের জন্য হাঁসের ঝাঁক নামিয়ে দেন খামারিরা। সারা দিন খাওয়ানোর পর বিকেলে নিয়ে আসেন খামারে। সঙ্গে আনা খাবার ছিটিয়ে দেন। দল বেঁধে খাবার খাওয়ার জন্য জড়ো হয় হাঁসগুলো। সামনে হাঁসের ঝাঁক আর পেছনে নৌকা নিয়ে আসেন খামারিরা। হাঁস যাতে দলছুট না হয়, এ জন্য নৌকা নিয়ে সঙ্গেই থাকেন তাঁরা। খাওয়া আর সাঁতার কাটা চলে সমান তালে। শৃঙ্খলা মেনে একসঙ্গে ফেরা। কখনো প্যাক প্যাক করে ডেকে ওঠে পুরো ঝাঁক। কখনো এক তালে পানিতে ডুব দেয় সাদা, কালো নানা রঙের হাঁস। এদের দল বেঁধে চলার রয়েছে নিপুণ ছন্দ।
পাইকারি ক্রেতারা খোঁয়াড় থেকে ডিম সংগ্রহ করে বাক্স ভর্তি করে ট্রাকে উঠিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ডিমের আড়তে চালান দেন।
পাইকারি বিক্রেতা কুর্শার আতিক হোসেন জানান, সপ্তাহে ২ ট্রিপে ৩ থেকে ৪ লাখ ডিম চালান করতে পারেন তাঁরা। মাসে অর্ধকোটি টাকার ডিম চালান করা যায়। হাওরের হাঁসের খোঁয়াড়গুলো দেশের প্রোটিন ঘাটতি পূরণে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।