ঘুষ লেনদেনের মামলায় মিজান-বাছিরের বিচার শুরু

ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির। ফাইল ছবি
ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির। ফাইল ছবি

ঘুষ লেনদেনের মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৪–এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই আদেশ দেন। ২৩ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণ শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।

অভিযোগ গঠনের সময় নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন দুই আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান ও খন্দকার এনামুল বাছির। এর আগে তাঁদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

দুদকের পক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রটি গত ৯ ফেব্রুয়ারি আমলে নেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। সেদিন মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন।

ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। এর আগে গত বছরের ১৬ জুলাই ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, খন্দকার এনামুল বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর অবৈধভাবে অর্জিত ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।

একইভাবে ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেছেন। এ জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। ওই অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় গত ৯ জুন ডিআইজি মিজান ওই অনুসন্ধান থেকে বাঁচতে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে। এর পরপরই দুদকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে খন্দকার এনামুল বাছিরের বক্তব্য গ্রহণ করে এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর ১৩ জুন পরিচালক ফানাফিল্লাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে।

অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা গেছে, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রাজধানীর রমনা পার্কে আসেন। সেখানে কথাবার্তা শেষে একসঙ্গে বেরিয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় যান। এরপর খন্দকার এনামুল বাছির ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে তাঁর বাসার দিকে চলে যান। একইভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্কে যান। সেখানে আলাপ-আলোচনা শেষে দুজন শান্তিনগর এলাকায় চলে যান। শান্তিনগরে এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে চলে যান। দুদকের কাছে এ ঘটনার প্রযুক্তিগত প্রমাণের পাশাপাশি চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছে।

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তিনি গত বছরের ১ জুলাই থেকে কারাগারে আছেন।