বনভূমি দখলে লাউয়াছড়ায় পরিকল্পিত আগুন?

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া উদ্যানসংলগ্ন বনে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। বন বিভাগের একটি দল গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে।  প্রথম আলো
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া উদ্যানসংলগ্ন বনে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। বন বিভাগের একটি দল গতকাল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে। প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন বনে গত মঙ্গলবার আগুন ধরে যায়। বন ও পরিবেশমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশনায় সরেজমিন তদন্ত শুরু করেছে বন বিভাগ। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, বনের জমি দখল করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে এ আগুন লাগিয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেসরকারি সংস্থা হীড বাংলাদেশের পেছনের দিকে বনে আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের চেষ্টায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আগুন নেভানো যায়। তবে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া এলাকায় ধোঁয়া উড়ছিল। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ না হলেও লতা-গুল্মজাতীয় গাছগাছালি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় বন বিভাগ। 

গতকাল দুপুরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন, লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে তদন্ত করে। এ সময় ঘটনাস্থলের ৩ একর এলাকাজুড়ে ধোঁয়া উড়ছিল। 

লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে না আনলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছড়িয়ে পড়ত। আগুনে ব্যাপকভাবে বাঁশ, লতা ও গুল্মজাতীয় ছোট আকারের গাছগাছালি পুড়ে গেছে। তা ছাড়া, অনেক জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়েছে। এ এলাকায় অনেক বন্য শূকুরের বিচরণ ছিল। পোড়া গন্ধে ধারণা করা যাচ্ছে আগুনে কিছু বন্য শূকরের বাচ্চা পুড়ে মরেছে। 

ঘটনাস্থলে ভূমির মালিকদের সম্পর্কে বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে এখানে হীড বাংলাদেশের কার্যালয় আছে। এখানে মোট ১৮৯ একর জমির পরিমাপ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় একটি মহল বেশ কিছু জমি দখল নিয়ে লেবুবাগান ও মৎস্য খামার গড়ে তুলেছে। একটি মহল মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে এখানে আগুন লাগিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়টি দেখে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। 

হীড বাংলাদেশ কমলগঞ্জের লিয়াজোঁ অফিসার নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঁরা এ জমির বন্দোবস্ত নিয়ে তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র এ সংস্থার ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছে। কিছু ভূমিতে বসতঘরও নির্মাণ শুরু করেছে। তিনিও মনে করেন, দখলদার ওই চক্রটি আগুন লাগিয়েছে। তবে পুড়ে যাওয়া অংশটি বন বিভাগের বলে তিনি জানান। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এখানকার ১৮৯ একর ভূমির মধ্যে মাত্র ৭৫ একর ভূমির সঠিক কাগজপত্র আছে। বাকি ভূমির কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এ সুযোগে ভূমিদস্যুরা মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে শিগগিরই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরীকে প্রধান করে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বন বিভাগ ও হীড বাংলাদেশ মিলে যৌথভাবে জরিপ করে দখলকৃত জমি উদ্ধার করবে। তা ছাড়া, তদন্তকালে আগুন লাগানোর সঠিক প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।