'কেউ যদি বলে টাকা লেগেছে, আমি আদায় করে দেব'

‘কেউ যদি বলে এই চাকরি পেতে একটা টাকা লেগেছে, আমি সেই টাকা আদায় করে দেব।’ আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১ জন কর্মচারীর নিয়োগপত্র হস্তান্তরের সময় রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

গতকাল বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের ‘হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪১ জন তরুণ-তরুণীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। ঘুষ ও তদবির ছাড়া চাকরি হয় না, এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসার জন্যই তিনি এ আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে ঘুষ বা তদবির ছাড়া সরকারি কোনো চাকরি হয় না। যেমন এখানে ৪৫০ জন আবেদনকারী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে চাকরি হয়েছে মাত্র ৪১ জনের। চাকরি হয়নি ৪০৯ জনের। বেশির ভাগ প্রার্থীরই চাকরি হয়নি। অতীতে দেখা গেছে, যাঁদের চাকরি হয় না, তাঁরা মনে করেন, তাঁদের টাকা নেই বা মামা নেই, তাই চাকরি হয়নি। তাঁদের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রচার হয় বেশি, কিন্তু যাঁরা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পান, তাঁরা বলে বেড়ান না যে তাঁদের চাকরিতে কোনো পয়সা লাগেনি। ফলে অতীতে স্বচ্ছ নিয়োগ দেওয়া হলেও তা প্রচার পায়নি। বিষয়টি খোলাসা করার জন্যই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপত্র হস্তান্তরের আয়োজন করেছেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যাঁরা দুর্নীতি করেন, তাঁদের একটা দুর্বলতা থাকে। তাঁরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার সৎসাহস দেখাতে পারেন না। কেউ যদি মুখের ওপর কিছু বলে বসে, তাঁদের সেই ভয় থাকে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, তাঁদের নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে, এটা সবাই জানুক। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হলো।’

অনুষ্ঠানে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের দেশপ্রেম ও সততার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। নিয়োগ পাওয়া একজন ছেলে ও একজন মেয়েকে তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আহ্বান তিনি।

এ সময় মেয়েদের মধ্য থেকে কথা বলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, বিকেলে সিরাজগঞ্জ বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ ফোন পেয়েই চমকে ওঠেন। চাকরির জন্য সকালে যে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তার ফল বেরিয়েছে। তাঁকে জানানো হয়, তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। সকাল ৯টায় তাঁর মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা। রাতেই তিনি বাড়িতে ফেরেন। পরদিন সকালে মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দেন। সেদিনই ফল প্রকাশিত হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ফোন পেয়েই আনন্দে আত্মহারা হন তিনি, তাঁর চাকরি হয়েছে।

ছেলেদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন বাঘা উপজেলার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি চাকরির জন্য অনেক পরীক্ষা দিয়েছি। এই চাকরির জন্য যখন ৫০০ টাকা দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট করি, তখন কষ্টই হয়েছিল, কিন্তু এত তাৎক্ষণিক, মানে আজ পরীক্ষা নিয়ে কালকেই রেজাল্ট! তারপরই চাকরি। এটা কখনোই ভাবিনি। এ জন্য জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৪১টি পদের বিপরীতে সাড়ে ৪০০ প্রার্থী চাকরির আবেদন করেন। ১৩ মার্চ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১০০ জন প্রার্থী। মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত মনোনীত হন ৪১ জন। তাঁদের মধ্যে চাকরি হয়েছে সাধারণ কোটায় ৩৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩, আনসার কোটায় ৪ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ১ জনের। তাঁদের মধ্যে চারজন নারী। গতকালই তাঁরা যোগদান করেছেন।