কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি ও ৩ ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ আরিফের

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মাদক মামলায় জড়ানোর ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন, তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তাঁর পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার এজাহার দাখিল করেন বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুজ্জামান লাবু, বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেন।

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজার রহমান এজাহারের কপি গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু আহমেদ।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রামের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আরিফুল ইসলাম তাঁর ওপর শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দীনসহ তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি এই তিন কর্মকর্তাকেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। বাকি দুজন হলেন সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলাম।

আজ আরিফের করা অভিযোগে নাজিম উদ্দীন, রিন্টু চাকমা ও রাহাতুলের নামও উল্লেখ আছে।

জানতে চাইলে ওসি মো. মাহফুজার রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম ওই দিন রাতের ঘটনা উল্লেখ থেকে শুরু করে পূর্বাপর ঘটনা উল্লেখ করে একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা এটি গ্রহণ করেছি। আমরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছি।’

আজ থানায় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব, সাবেক সভাপতি সময় টিভি ও সমকাল প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক চ্যানেল আই প্রতিনিধি শ্যামল ভৌমিক, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের ইউসুফ আলমগীর, বণিক বার্তা ও এসএ টিভির প্রতিনিধি বাদশা সৈকত, ডিবিসি নিউজের ওয়াহিদুজ্জামান তুহিন, জিটিভির প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম, বার্তা২৪ ডটকমের জুয়েল রানা, আমার সংবাদের প্রতিনিধি ইমতে আহসান শীলু, আরটিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধি একরামুল হক সরকার, ইত্তেফাক ও বাংলানিউজ২৪ ডটকমের প্রতিনিধি ফজলে এলাহী, কুড়িগ্রাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোসসহ স্থানীয় সাংবাদিকেরা।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, নজিরবিহীন ঘটনা আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া, নির্যাতন করা, ক্রসফায়ারের জন্য নিয়ে যাওয়া, পরিবারের জানার বাইরে জামিন দেওয়ার বিষয়গুলো। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের কোনো ঘটনা বাংলাদেশে না ঘটে, এ জন্যই আসামিদের ফৌজদারি আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।

নুরুজ্জামান লাবু বলেন, ‘আরিফুল ইসলামের ওপর নির্যাতনের ঘটনা এতটা ভয়াবহ যে দেশের ফোজদারি আইনে এর বিচার হওয়া জরুরি বলে মনে করি। যথোপযুক্ত সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনার বিচার হওয়া জরুরি। সবার জন্যই সমান বিচার হওয়াটা দরকার। আর এ জন্যই আরিফুল ইসলাম এজাহার দাখিল করেন। এটি আমরা ওসির কাছে জমা দিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি, পুলিশ আরিফুল ইসলামের মামলা গ্রহণ করে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করবে।’