এক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন শেষ
দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন সোহেল রানা ওরফে বকুল (২০)। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন আর কোনো দিন পূরণ হবে না। ভাগ্যবদলের আগেই তিনি গত বুধবার দেশে ফিরেছেন লাশ হয়ে। ৫ মার্চ তিনি সেখানে এক দুর্ঘটনায় মারা যান।
সোহেল রানার বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমানের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ মার্চ মালয়েশিয়ায় পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে মাটি ধসে চাপা পড়ে তিনি মারা যান। সেখানে তিনি শ্রমিকের কাজ করতেন। গত বুধবার রাতে তাঁর লাশ বাড়িতে আনা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শার্শা উপজেলার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে সোহেল রানার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে আরও জানা গেছে, মতিয়ার রহমানের দুই ছেলে। বড় ছেলে সোহেল রানা। ২০১৭ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্টুডেন্ট ভিসায় তিনি মালয়েশিয়া যান। ছোট ছেলে জিসান হোসেন (৮)। সে উপজেলার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। এক বিঘা জমির বসতভিটায় তাঁদের ছোট্ট একটি ঘর আছে। তাঁদের কোনো আবাদি জমি নেই।
সোহেল রানার বাবা মতিয়ার রহমান জানান, তিন বছর আগে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান সোহেল রানা। তখন তিনি স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য তাঁর ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে শ্রমিকের কাজ করতেন সোহেল রানা। ৫ মার্চ সেখানে পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে মাটি ধসে চাপা পড়ে তিনি মারা যান।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে মতিয়ার রহমান বলেন,‘দিনমজুরি করে ঠিকমতো সংসার চলে না। সংসার যাতে একটু ভালো করে চলে, সে জন্য চড়া সুদে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে সোহেল রানাকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে বাড়িতে সে ২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এখনো লক্ষাধিক টাকার দেনা আছি। তা ছাড়া লাশ দেশে আনতে আমার ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব, আর কী করেই বা ধারদেনা শোধ করব, তা জানি না।’