করোনার ঝুঁকিতে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার চরম ঝুঁকির মধ্যে থেকে কাজ করতে হচ্ছে ঢাকার নিম্ন আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও বিচারকদের।

আইনজীবীরা বলছেন, আদালত খোলা থাকার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ঢাকার নিম্ন আদালতে আসছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য আদালত এলাকায় কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। মামলার শুনানির সময় এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলা একেবারই অসম্ভব।

আদালতে কর্মরত আইনজীবী ও কর্মচারীদের এখন একটাই জিজ্ঞাসা, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হবে কি না?

এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ বিচারপ্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। পরিপূর্ণভাবে যদি কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে। কারণ অনেকেই জরুরি বিষয় নিয়ে কোর্টে আসেন। সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। কোর্ট খোলার আগে আমরা একবার বসব।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী যাঁরা আছেন, তাঁদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোর্ট খোলার আগেই আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব, তখন আপনাদের সেটা জানাব। নিম্ন আদালত যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের অধীনে, সুতরাং সব ব্যাপারেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

১৩ মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। বন্ধ থাকবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরু প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে আসছেন। আসছে ছোট ছোট শিশুও। আদালত এলাকায় করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রস্তুতি নেই। কোনোভাবে যদি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা ভয়ংকর আকার ধারন করবে। সাধারণ আইনজীবী ও বিচারকেরা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কারাগার থেকে আসামিদের হাজির করতে হবে না
অবশ্য করোনাভাইরাসে সংক্রমণের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে কারাগারে আটক আসামিদের মামলার শুনানিতে হাজির করানোর বাধ্যবাধকতা শিথিল করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে কারাবন্দি-আসামিদের জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে আদালতে উপস্থিতকরণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে কারাবন্দী-আসামিদের কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালতকক্ষে হাজির করা যাবে না। কারাবন্দী-আসামিদের কারাগার রেখে জামিন শুনানি করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করতে হবে।’

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এসানুল হক সমাজী প্রথম আলোকে বলেন, আইনে আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। তিনি বলেন, এই আইনটি প্রয়োগ করার চেয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং আইন মেনে চলতে বাধ্য করা জরুরি।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে জানা থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে যান এবং তা গোপন করেন তা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জারিমানা করতে পারেন অথবা উভয় দণ্ড দিতে পারেন।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে ইতিমধ্যে একজন মারা গেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৭ জন। ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।