করোনায় পেঁয়াজ চাষির শাপেবর

ভালো দামের আশায় কৃষকের মধ্যে পেঁয়াজ তোলা ও বাড়িতে নিয়ে পরিচর্যার ধুম পড়েছে। বেড়া, পাবনা, ১৯ মার্চ। ছবি: বরুন রায়
ভালো দামের আশায় কৃষকের মধ্যে পেঁয়াজ তোলা ও বাড়িতে নিয়ে পরিচর্যার ধুম পড়েছে। বেড়া, পাবনা, ১৯ মার্চ। ছবি: বরুন রায়

মাস তিনেক আগে সাধারণ মানুষের প্রায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল পেঁয়াজ। ওই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ থেকে প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অথচ গত সোমবার পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাজারে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছিল পাইকারি ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এমন দামে সাঁথিয়ার পেঁয়াজচাষিরা লোকসানে পড়েন। কিন্তু করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় পেঁয়াজচাষিদের জন্য শাপেবর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনার কারণে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন, এই ভাইরাসের কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা আবারও বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া পরিবহন সংকটসহ নানা কারণে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে উপজেলার পেঁয়াজের হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা গিয়ে ভিড় করছেন। এতে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম মণে ৫০০ টাকা বেড়েছে। উপজেলার হাটগুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি ৩৩ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। এমন দামে পেঁয়াজচাষিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানান, এমন দাম পেলে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা লাভ থাকবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এবার উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম বা মূলকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। মাস দেড়েক আগে সেই পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেছে। কৃষকেরা এখন হালি বা মূল পদ্ধতিতে আবাদ করা পেঁয়াজ ঘরে তুলছেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৬০ হেক্টর জমির হালি পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠেছে। মাস দেড়েকের মধ্যে বাকি পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেঁয়াজচাষিরা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকেরা লোকসান দিয়ে আসছেন। কিন্তু এবার দাম বেশি দেখে তাঁরা আশা করেছিলেন লাভ করার। এ জন্য উপজেলায় এবার পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। তবে আবাদ করতে গিয়ে এবার কৃষকদের খরচ আরও বেড়েছে। কারণ বেশি দামে পেঁয়াজের বীজ ও চারা কিনতে হয়েছে। গত বছরের তুলনায় শ্রমিকের খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ২৭ টাকায়। গত সোমবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করে চাষিদের লোকসান হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এই দাম ৩৩ থেকে ৩৮ টাকায় গিয়ে দাঁড়ানোয় কৃষকদের লাভ হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে। বেড়া, পাবনা, ১৯ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে। বেড়া, পাবনা, ১৯ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার ছিল উপজেলার কাশিনাথপুরে পাইকারি পেঁয়াজের হাট। সরেজমিনে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি যেমন হয়েছে, তেমনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরও আগমন ঘটেছে। এই হাট থেকে গতকাল ৪০ থেকে ৪৫ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি গতকাল উপজেলার করমজা হাটেও প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি লক্ষ করা গেছে।

কাশিনাথপুর হাটের আড়তদার আবদুস সালাম ও করমজা হাতের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। মানুষ হঠাৎ করেই বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছে। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পেঁয়াজের পাইকারেরা হাটে এসে দেদারসে পেঁয়াজ কিনছেন।

কাশিনাথপুর হাটে পেঁয়াজ কিনতে আসা মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী রইজউদ্দিন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের জন্য ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ হবে বলে গুজব আছে। তাই লোকজন বেশি বেশি পেঁয়াজ কিনছে।’

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার ধুম পড়ে গেছে। পেঁয়াজ তোলার পর সেই পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এ জন্য অনেক বাড়িতেই নারী-পুরুষদের ব্যস্ত সময় কাটছে।

নিজ বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পেঁয়াজ পরিষ্কার করার সময় বায়া গ্রামের কৃষক হাফেজ ব্যাপারী বলেন, ‘সোমবারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ২০ টাকায় নামছিল। এখন আবার ৩৫ টাকার ওপরে দাম উঠেছে। তাই জমির পেঁয়াজ সবাই মিইল্যা একটু তাড়াতাড়ি তুইল্যা পরিষ্কার করতেছি। যাতে এমন চাঙা বাজারটা ধরব্যার পারি।’

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘মাসখানেক হলো কৃষকদের ঘরে পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। সব পেঁয়াজ উঠতে আরও মাস দেড়েক সময় লাগবে। এবার পেঁয়াজের ফলনও খুব ভালো হয়েছে।